বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে নির্বাচন নিয়ে সব সময়ই এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে।নির্বাচন হলে কেমন হবে? শান্তিপূর্ণ হবে তো? এ রকম নানা প্রশ্ন জনমনে ভেসে বেড়ায়।এর অবশ্য যৌক্তিক কারণও আছে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যে কলঙ্ক সংযোজিত হয় তা সহজে ভুলে যাবার মতো না।
নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজ ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৩০ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ নির্বাচন মাইলফলক হয়ে থাকবে। দলীয় সরকারের অধীনে এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সত্যি আমাদের আশাবাদী করেছে। কেননা ভোট এলেই সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। সেই হিসাবে এবারের পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এবং আনন্দমুখর।আমরা এমন ধরনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই আশা করেছিলাম।এমন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।একই সঙ্গে অভিনন্দন জানাচ্ছি সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে।তাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নির্বাচনের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।
নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই।একদল জিতবে একদল হারবে এটা প্রকৃতির নিয়ম।বিজয়ী দল অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের কল্যাণে নতুন উদ্যমে কাজ করবে আর পরাজিত দল হারের মধ্য দিয়ে ভুল শোধরে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করবে।
আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে।তার নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা মনে করি উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষায় জনগণ মহাজোটকে পুনরায় বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি জোট তাদের পুরনো ধ্যান ধারণাকে আকড়ে ধরে জনগণকে পাশ কাটিয়ে বিকল্প উপায় ক্ষমতার সিড়িতে পা রাখেতে চেয়েছিল। ফলশ্রুতিতে প্রত্যাখাত হয়েছে। আমরা আশা করবো তাদের বোধোদয় ঘটবে।
০২
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জাতীয় চারনেতার অবদান চিরকাল জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।যদিও ৭৫ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে তাদের করুণভাবে দেশের জন্য জীবন দিতে হয়েছিল পরাজিত পতিত শক্তির হাতে।তাদের হত্যা করেই পরাজিত শক্তি ক্ষান্ত হয়নি, পরিবারের সদস্যদেরও নানাভাবে অত্যাচার করেছে।তারপরও তারা আপোস করেননি।দুঃসময়কে পাশ কাটিয়ে দেশ ও মানুষের কথা ভেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে নিজেরা যেমন উজ্জীবিত হয়েছেন তেমনি মানুষকেও উজ্জীবিত করেছেন।জাতীয় চারনেতার পরিবারের এমনই একজন আলোকিত মানুষ ও রাজনীতিবিদ হলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।তিনি ৩রা জানুয়ারি থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকালকাল করেছেন (ইন্নাইলাহি… রাজিওন)।তাঁর মৃত্যু গণতান্ত্রিক এবং মূল্যবোধের রাজনীতিতে বড় রকমের আঘাত।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আমার বন্ধু। ১৯৬৯ সাল থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ ছিল তাঁর স্বপ্ন। দেশের গণতান্ত্রিকধারার ক্রান্তিলগ্নে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দল ও দেশের মানুষের পক্ষে যে ভূমিকা পালন করেছেন তা সত্যি অসাধারণ। তাঁর মতো গণতান্ত্রিক সহনশীল মনোভাব, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিক আমাদের বড় প্রয়োজন ছিল। তাঁর মৃত্যু পরিবারের জন্য যেমন বেদনার তেমনি দেশের জন্যও। আমরা তাঁর রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। দেশ, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।