মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ফের অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত সপ্তাহে চারটি পুলিশ স্টেশনে বিদ্রোহীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা এলো।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্যা হথে রাজধানী নেইপিদোতে সোমবার সাংবাদিকদের জানান, রাখাইনে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বিদ্রোহীদের দমনে সেনাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের বিরোধপূর্ণ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে গেল কয়েক সপ্তাহে বেশকিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে এসব সংঘর্ষ হয়। আরকান আর্মি সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ায় স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে আসছে।
মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য হলো রাখাইন। তাছাড়া ওই অঞ্চলটিতে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় ২০১৭ সালের আগস্টে।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে দমনপীড়ন শুরু হলে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা। এমন অভিযানের বৈধতা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী।
এদিকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এমন অভিযানকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করে। ওই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যা দেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে সর্বশেষ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন বুথিয়াডংয়ের শহরতলীতে পুলিশের তল্লাশি চৌকি ও স্টেশন লক্ষ্য করে মধ্যরাতে হামলায় পুলিশের ১৩ কর্মকর্তা নিহত ও নয়জন আহত হন।
সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি বলছে, সংঘর্ষের ওই ঘটনায় তাদের তিনজন সদস্য নিহত হন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা আরও বলেন, পুলিশের তল্লাশি চৌকি ব্যবহার করে ভারী অস্ত্র দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এ কারণে তারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ্যা হথে রাজধানী নেইপিদোতে সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বিদ্রোহীদের দমনে জোরাল অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাখাইনে গত কয়েক সপ্তাহের সংঘর্ষ-সহিংসতার কারণে আরও প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। যাদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবার। সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকেই তাদের সহায়-সম্বল নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।