ডেমরায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে দুই শিশুকে হত্যা

ডেস্ক রিপোর্ট

পুলিশ গত সোমবার রাতে ডেমরার একটি বাড়ি থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুইজনের বিষয়ে আজ বুধবার বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ডেকে এনে দুই শিশুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। দুই শিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তারদের বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নিহত দুই শিশু হচ্ছে ডেমরার শাহজালাল রোডের এসি গলির কালাম মিয়ার বাড়ীর ভাড়াটিয়া দশমিনা থানার আলীপুরা গ্রামের মো. ফরিদুল ইসলামের মেয়ে ফারিয়া আক্তার দোলা(৫) ও ওই এলাকার রশিদের বাড়ীর ভাড়াটিয়া ঝালকাঠি থানার বাউকান্দি গ্রামের পলাশের মেয়ে নুসরাত জাহান (৪)।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে শিশু নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলাকে (৫) ঘরে ডেকে নেয় গোলাম মোস্তফা। তিনি তার ভাই আজিজুল বাওয়ানীকে আগেই বাসায় খবর দিয়ে ডেকে নেন মোস্তফা।

ঘরে ডেকে প্রথমে শিশু দুটিকে নিজের স্ত্রীর লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেয় মোস্তফা। পরে তারা দুইভাই মিলে ইয়াবা সেবন করে শিশু দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

এসময় শিশুরা চিৎকার শুরু করে। একপর্যায়ে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ফারিয়াকে গলাটিপে হত্যা করে আজিজুল। আর নুসরাতকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে মোস্তফা।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে যাত্রাবাড়ি ও ডেমরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই আসামি গোলাম মোস্তফা (২৮) ও আজিজুলকে (৩০) গ্রেপ্তার করে ডেমরা থানা পুলিশ।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, শিশু দুটিকে ঘরে এনে আজিজুল ও মোস্তফা ইয়াবা সেবন করায়। এরপর উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে দেয়। শিশু দুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তারা চিৎকার করে।

তখন গানের শব্দ আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতেও শিশুরা বেশি করে চিৎকার শুরু করলে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তাদের হত্যা করা হয়।

হত্যার পর আজিজুল পালিয়ে যায়। আর মোস্তফা দুই শিশুর মরদেহ নিয়ে বাসায় থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি খাটের নিচে শিশুদের মরদেহ রেখে দেন।

তিনি বলেন, মোস্তফার স্ত্রী সন্ধ্যার দিকে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরলে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখতে পান। মেঝেতে শিশুদের স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় স্বামী-স্ত্রীর চিৎকার চেঁচামেচিতে আশেপাশের লোকজন বিষয়টি টের পায়। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই মোস্তফা পালিয়ে যায়।

মোস্তফা সিরামিকের কারখানায় ও আজিজুল একটি বেকারিতে কাজ করতেন।

ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, শিশুরা চিৎকার করলেও উচ্চস্বরে গান বাজানোর কারণে বাইরে কেউ শুনতে পায়নি। শিশু দুটি নার্সারিতে পড়াশুনা করতেন। স্কুল শেষে এলাকায় দুইজন ঘোরাঘুরি করছিলেন।এ সময়ই তাদেরকে সাজিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে ডেকে নেয় মোস্তফা।

ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত কী না জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, মোস্তফা ফোন করে আগেই আজিজুলকে বাসায় ডেকে নেয়। তার মানে বোঝা যাচ্ছে এখানে পূর্ব কোনো পরিকল্পনা ছিল। তারা একে অপরের মামাত-ফুফাত ভাই।

আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ ও আলামত সরবরাহ করে পুলিশ সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি।

গত সোমবার (৭ জানুয়ারি) রাতে ডেমরার ‘নাসিমা ভিলার মোস্তফার ঘর থেকে দুই শিশু নুসরাত জাহান (৪) ও ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) মরদেহ পাওয়া যায়। এদিন দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল তারা। পরে তাদের ঘর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত নুসরাতের বাবা পলাশ হাওলাদার বাদী হয়ে গ্রেপ্তার মোস্তফা ও আজিজুলের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মোস্তফা ও আজিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে