রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদকে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালনের পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন দল-মতের পার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
বুধবার একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
রীতি অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনে গঠিত সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি। আর এই ভাষণ অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। ফলে রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে নিজের থেকে কিছু বলার থাকে না।
আবদুল হামিদ বলেন, আমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান এই মহান জাতীয় সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।
জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না উল্লেখ করে ভাষণে সব দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, কর্মচঞ্চল, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সকলের কাম্য। ইতিহাসের সাহসী সন্তানেরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা।
তিনি বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের সম্পূর্ণ অংশ পড়েননি। টেবিলে সেটা উপস্থাপনের পর তা পঠিত বলে গণ্য হয়। আর সংক্ষিপ্ত ভাষণটি উপস্থাপন করেন তিনি।
ভাষণে ‘নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে’ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের আগে বাংলাদেশের মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার কথাও আসে ভাষণে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।
এই ভাষণে বাংলাদেশের এগিয়ে চলার স্বপ্ন, উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, সমাজের সকল স্তরে প্রত্যক্ষ জন-সম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হব।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। বলেছেন, জনগণের রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।