নেতৃত্ব সংকটে জাতীয় পার্টি

বিশেষ প্রতিনিধি

দলের মহাসচিব পরিবর্তনের পর সাংগঠনিক ও নেতৃত্বে সংকটে পড়েছে জাতীয় পার্টি। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর নিজের অসুস্থ অবস্থায় হঠাৎ করে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দায়িত্ব দেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাঙ্গাকে দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে জাপা আরো বেশি বিপর্যয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। তবে এমন অবস্থা কীভাবে উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে ভাবছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি।

এ দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসুস্থতা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে দলের নেতাকর্মীদের। গত কয়েকদিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে পৃথক আলাপে এসব কথা উঠে আসে তাদের মুখ থেকে। প্রকাশ্যে কথা বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সবাই। তারা বলেন, ‘নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে হাওলাদারের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।’

universel cardiac hospital

জাপা নেতাদের মতে পার্টির মহাসচিব পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসেবে তখন দেখছিলেন, একাদশ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ইস্যু। তারা মনে করেছিলেন হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে আওয়ামী প্রীতম একজনকে দায়িত্ব দিলে তিনি দলের পক্ষে লড়াই করে অন্তত ৬০টি আসন বাগিয়ে আনবেন। সেই দৃষ্টিকোন থেকে হাওলাদারকে সরিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব করা হয়। রাঙ্গা দায়িত্ব পাওয়ার পর দলের একটি অংশ তাৎক্ষণিক খুশি হলেও পরবর্তীতে রাঙ্গার কর্মকাণ্ডের প্রতি তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জাপার একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি আশাবাদী ছিলাম রাঙ্গা মহাসচিব হওয়ায়।’

কেন আশাবাদী ছিলেন, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাঙ্গার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে জোটগতভাবে আসন ভাগাগিতে হাওলাদারের চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবে রাঙ্গা।’ তিনি বলেন, ‘যা আশা করেছিলাম কিছু হয়নি। বরং উল্টো হয়েছে। যেখানে আমাদের দাবি ছিল ১০০ আসন। সেখানে একভাগও আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে রাঙ্গা।’ এ কারণে দলের নেতাকর্মীরা এখন রাঙ্গার প্রতি চরম ক্ষুব্ধ বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটভুক্ত হয়ে বিএনপির চেয়ে বেশি সংখ্যক আসন পেলেও স্বস্তিতে নেই জাপার নেতাকর্মীরা। বরং দলের শীর্ষনেতাদের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূল জাতীয় পার্টির। বিশেষ করে বিগত নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে প্রার্থীদের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি পার্টির হাইকমান্ড। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদ থেকে বাদ দেয়ার পর এ পদে দায়িত্ব পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গা পার্টির প্রার্থী বা কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের দলীয় বা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কোনো দিক-নির্দেশনা দেননি বলে জানিয়েছে জাপার বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম এবং আমাদের প্রত্যাশা ছিল হাওলাদারের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী থাকবে রাঙ্গা। কিন্তু এখন কিছুই হচ্ছে না বরং দেখছি উল্টো।’ তারা বলেন, ‘মহাসচিব হওয়ার পর থেকে রাঙ্গা অনেক শীর্ষ নেতারও ফোন ধরছেন না।’
কারণ কী জানতে চাইলে জাপার একজন সাংগঠনিক নেতা বলেন, ‘মন্ত্রীত্ব না পাওয়াতে তার ভেতরে কষ্ট আছে। সে কারণে তিনি দলের নেতাদের কারো ফোন ধরছেন না। সারাদেশের নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজ খবর নিচ্ছেন না।’ এ প্রসঙ্গে জানতে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে গতকাল ফোন দিলে তিনি এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেনি।

পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করে রাঙ্গা মহাসচিব হওয়ায় মহাজোট থেকে জাপাকে অপমানজনক আসন দেয়া হয়েছে। যেখানে জাপার নির্বাচিত আসনই ছিল ৩৭টি। সেখানে ২৪টি আসন দেয়ায় মেনে নিতে পারেনি দলটির নেতাকর্মীরা। পার্টির উম্মুক্ত প্রার্থীদের অভিযোগ নির্বাচনে পার্টির কোনো রকম আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বরং সে মুহূর্তে কোনো প্রার্থীর ফোনও রিসিভ করেন নি রাঙ্গা। তার ওপর দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত পার্টির নেতাকর্মীরা। এমতাবস্থায় স্বস্তিতে নেই জাপার কর্মীরা। এ ছাড়া জিএম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও রাঙ্গা মহাসচিব হওয়ার পর থেকে পার্টির সিনিয়র নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশিদ, প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, এমএ কাসেম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীসহ দলের সিংহভাগ নেতারাই দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না। এমনকি এরশাদের রোগমুক্তি কামনা করে বিভিন্ন দোয়া ও মিলাদ মাহফিলেও তাদের দেখা মেলেনি। কিছুদিন আগেও পার্টির দুই প্রভাবশালী নেতা সুনীল শুভ রায় ও এসএম ফয়সল চিশতীকেও দলীয় কর্মকাণ্ডে তেমন একটা দেখা যাচ্ছেনা।

অন্যদিকে দশম সংসদে পাঁচ বছর গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা নিয়ে থাকার পর একাদশ সংসদের যাত্রা শুরুর আগে আবার সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় জাতীয় পার্টিকে। এরশাদের দলটি কি সংসদের বিরোধী দলের ভ‚মিকাতেই থাকবে, না কি সরকারে যোগ দেবে, তার মীমাংসা নিয়েও বেশ কয়েকদিন ছিল আলোচনা-সমালোচনা। সর্বশেষ সকল জল্পনা ও কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সংসদের প্রধান বিরোধী দল হয় জাতীয় পার্টি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গড়ে ভোটে অংশ নিলেও ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে বদলে যায় সমীকরণ। আগের মতো সরকারে যোগ দিলেও সংসদে বিরোধী দলের আসন নেয় তারা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপা জোটভুক্ত আসনে ভোট করে আবারো প্রধান বিরোধী দলের আসনে আসীন হয়। এবার শুধু বিরোধী দলের ভ‚মিকাতে থাকছে জাপা।

এ দিকে নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির নেতারা দলকে সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের ভ‚মিকায় দেখতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন। তখনও নেতাকর্মীদের মুখে ছিল একই স্লোগান। দলের যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল আলম রুবেল ও গোলাম মো. রাজু বলেন, ‘মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে জাতীয় পার্টির কোনো লাভ হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে।’

অপরদিকে নির্বাচনের সময় দলীয় ফলাফল আগের চেয়ে খারাপ হওয়ায়, ভোটের সময় অনিয়ম, নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্য, সিনিয়র নেতাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা- নানা অভিযোগ নিয়ে সরব হয়ে উঠেছেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। হুট করে কারো কারো দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বনে যাওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। মধ্যমসারির নেতারা বলছেন, দলটির সঙ্কটে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের তারা কাছে পান না। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া তো দূরের কথা, দলের বনানী ও কাকরাইলের কার্যালয়েও তারা যান না।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব জহিরুল আলম রুবেল বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতাই মনে করেন, একবার এমপি হয়ে গেলাম তো সারা জীবনে আর নামব না। প্রেসিডিয়াম মেম্বারদের তো সুখে দুঃখে কর্মীদের পাশে থাকার কথা। যে কোনো পরিস্থিতি ট্যাকল দেয়ার কথা। অথচ তারাই পার্টি অফিসে আসেন না।’

জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটনের অভিযোগ, ‘যারা পাজেরো জিপ নিয়ে আসছে, তারাই প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দলে এমনও অনেক এমপি আছেন, যাদের ব্যক্তিগত সহকারীরা পার্টি অফিস কোথায় সেটা জানেন না। যারা এমপি হয়েছেন তারা পার্টি অফিসে আসছেন না।’

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘পার্টি অফিসে না আসলে বলা হয়, কেন আসেননি? এলে বলা হয়, কেন এসেছেন?। কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাকে জানানো হয় না। নিজে থেকে খোঁজ নিয়ে আসি। ইমেজের ক্ষতি হয়, তবুও তো দলটা ছেড়ে দিতে পারি না।’

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মাসুদা রশীদ চৌধুরীর অভিযোগ, ‘দলের কমিটি গঠনের সময় ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয় না।’ এসব অভিযোগের বিষয়ে দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন সব বিষয়ে এবার তিনি কঠোর হবেন। নির্বাচনের আগে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে ৮৮ বছর বয়সী অসুস্থ এরশাদ মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তার পদে রাঙ্গাকে সেই দায়িত্ব দেন।

পরে আবার দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল হাওলাদারকে। অতীত ও বর্তমান সময়ে জাতীয় পার্টি নেতাদের বিভিন্ন সময় একে অন্যকে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির লোক বলে অভিহিত করতে দেখা গেছে। দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের কথা উঠে আসে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আলমগীর শিকদার লোটনের কথায়। তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘অতীতে যারা বিভিন্ন সময়ে দল থেকে বেরিয়ে গেছে, যাদের বহিষ্কৃত করা হয়েছে, তাদেরই আবার মহাসচিব করা হয়েছে।’

এ দিকে জাতীয় পার্টির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এরশাদের ইচ্ছায় দলের মহাসচিব বদলেছে যখন-তখন। নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হওয়া পরিবহন মালিক নেতা রাঙ্গাকেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চারবার দল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল। সম্প্রতি সেকথা নিজ মুখেই স্বীকার করেন রাঙ্গা। বিভিন্ন সময় এরশাদকে রাজনৈতিক পিতা অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের চেয়ারম্যানের কোনো ভুল নেই।’ রাঙ্গা বলেন, ‘নিবেদিত কর্মীদের হুট করে বহিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। এটা বন্ধ করা উচিত। আঁতেলদের হাত থেকে আমাদের দলটিকে রক্ষা করতে হবে।’

অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের জন্য দিনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওইদিন বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনই সাবেক রাষ্ট্রপতির ছিল শেষ নির্বাচন। বছরের শেষ মুহূর্তে ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়াই ছিল ধ্যান জ্ঞান ও তার একমাত্র লক্ষ্য। গত এক বছর ধরে এরশাদ নিজেই বলে আসছেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে গেছি, ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনই আমার শেষ নির্বাচন। এই নির্বাচনে লড়াই করে ক্ষমতায় যেতে চাই। সরকার গঠনই আমার জীবনের শেষ প্রত্যাশা। বিরোধী দলে নয়, সরকার গঠনই আমার জীবনের শেষ স্বপ্ন। সেই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন পুরণে সুখ-অসুখ নিয়ে গত একবছর মাঠে-ময়দানে চষে বেড়িয়েছেন জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ।

কোটি কোটি টাকা খরচ করে সভা-সমাবেশ করেছিলেন। মনোনয়নের টোপ দিয়ে প্রকাশ্য ও গোপনে দলে ভিড়িয়েছেন অনেক বিত্তশালীকে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত অর্ধশতাধিক দল নিয়ে রাজনৈতিক জোট গঠন করে চমকও দেখিয়েছেন তিনি। সবকিছুর লক্ষ্য একটাই, শেষ বয়সে এসে এরশাদের আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়া। আর তার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখাই ছিল দলটির চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্য। কিন্তু বছর শেষে জীবনের এই শেষ সময়ে এসে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ভোটে বিজয়ী হয়ে এরশাদের দল ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। বিরোধী দলের আসনে আসীন হয়। বরং ২০১৮ সাল ছিল এরশাদ ও দলের জন্য চরম বিপর্যয়ের বছর। নেতাকর্মীরা পার করছিলেন কঠিন সময়। এই অবস্থা থেকে নতুন বছরে দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়েই চিন্তিত তারা।

জাপা সূত্র জানায়, একাদশ নির্বাচনে এরশাদের অনুপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এমন কঠিন অবস্থা ও বিপর্যয় দেখে দলটির নেতাকর্মীরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেকেই। প্রার্থী হয়েও মাঠে সক্রিয় ছিলেন না অনেক নেতা। আর তাদের বক্তব্য ছিল পার্টির চেয়ারম্যান বিদেশে। ঢাল নেই তলোয়ার নেই- এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা। চরম হতাশায় ক্ষোভে দুঃখে সাবেক হুইপ শওকত চৌধুরী, আমির হোসেন ও অনেক প্রার্থী নির্বাচনের সময় মাঠ থেকে সরে পড়েছিলেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টি ও দলটির চেয়ারম্যানের ভবিষ্যত নিয়েও নেতাকর্মীদের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

তাদের অনেকে এখন থেকে জাতীয় পার্টি ছাড়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। জাপাকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে নির্বাচনী মাঠে নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল যার, কঠিন অসুখ নিয়ে সেই এরশাদের সময় কাটছে তখন সিঙ্গাপুরে হাসপাতালের বিছানায়। তার অনুপস্থিতিতে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির হাল কে ধরবেন, কী হবে দলটির অবস্থা- এ নিয়ে নতুন করে ভাবনায় পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, মঞ্জুর হত্যা মামলার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার আতঙ্ক নিয়ে অসুস্থ এরশাদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তার অবর্তমানে সার্বিক নেতৃত্ব দেয়ার কথা পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে তিনি এখন নীরব রয়েছেন। ছোট ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে করা হয়েছে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর নির্বাচনের আগে সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় জাপা প্রার্থীরা প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলাসহ নানা প্রতিক‚লতার মুখোমুখি হলেও কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত বিবৃতি দেয়নি কেউ। এ নিয়ে দুঃখ ও হাতাশা ব্যক্ত করেন অনেক জাপা নেতা।

জাপা সূত্র জানায়, একেক সময় একেক কথা বলা, সিদ্ধান্তহীনতা, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, মনোনয়ন বাণিজ্য, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের দলে পদায়ন ও মনোনয়ন, স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ানো ও সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রাখাসহ নানা কারণে ২০১৮ সাল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্য ছিল বিপর্যয়ের বছর। তাছাড়া শারিরিক অসুস্থতা সাবেক রাষ্ট্রপতিকে ছিটকে ফেলেছে স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে। সব মিলিয়ে এই বছরে ক্ষমতায় যাওয়া এরশাদের জীবনের শেষ স্বপ্ন পূরণ হলো না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে