ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখে প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প এবং পরদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল করেছে বা চুক্তি থেকে যারযার দেশকে সরিয়ে নিয়েছেন। পৃথিবীব্যাপি এ নিয়ে এক নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমাদের জানা দরকার, এই চুক্তিটি আসলে কী, কেন হয়েছিল এবং এ চুক্তি বাতিলের ফলে ঝুঁকিটা কোথায়।
এই চুক্তির নাম ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি। সংক্ষেপে আইএনএফটি। বাংলা করলে দাঁড়ায় মাঝারি পাল্লার পরমাণু শক্তি চুক্তি। চুক্তিটি কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্টদ্বয় করেননি। করেছিলেন শীতল যুদ্ধের সময়ের দুই প্রেসিডেন্ট। স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি মিখাইল গর্বাচভের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট এটির চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল ১৯৮৮ সালের ২৭ মে।
এই চুক্তির মূল বক্তব্য ছিল, দুই পক্ষ তাদের ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য সব ধরণের ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপনাস্ত্র এবং উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ধ্বংস করবে। যে গুলোর পাল্লা ৫০০ থেকে ১ হাজার কিলোমিটার এবং স্বল্প-মধ্যম পাল্লার ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। তবে এ চুক্তিতে আকাশ থেকে অথবা জল থেকে ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়ার কথা উল্লেখ ছিল না। এই চুক্তি অনুসারে ১৯৯১ সালের মে মাস পর্যন্ত ২৬৯২ টি ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংস করা হয়। তার পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের অধীনে ছিল এটি। ১০ বছর পার হয়েছিল বটে, কিন্তু পরবর্তীতে দুই দেশই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ আনে। ২০০৭ সালে রাশিয়া সেনাবাহিনীর চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ অব আর্মড ফোর্সেস ইউরি বেলুয়েভস্কি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ এনে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেন। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে এসএসসি-৮ ক্রুজ মিসাইল পরিক্ষা চালিয়ে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করে। এরপর ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৭ সালেও এমন চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে।
গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের উগ্র জাতিয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, সোভিয়েত যুগের চুক্তিটি থেকে তিনি সরে যাবেন। কারণ রাশিয়া বহু বছর ধইে এই চুক্তিটি লঙ্ঘন করে আসছে। যেই বলা, সেই কাজ। তার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জন বোল্টনকে পাঠিয়ে দিলেন ক্রেমলিনে। এরপরও ৬০ দিন সময় বেধে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পম্পেই। বলেছিলেন এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া যদি চুক্তি মেনে চলার মনোভাব না দেখায় তাহলে এটি বাতিল করা হবে।
সর্বশেষ ট্রাম্পর চুক্তি বাতিল বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট মনে করেন, মস্কো এই চুক্তি অমান্য করেনি। নিজে চুক্তি বাতিলের সময় বলেছেন, আমেরিকার পার্টনাররা ঘোষণা দিয়েছেন এই চুক্তি বাতিলের। ফলে আমরাও এটা বাতিল করলাম। তিনি এও বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে ক্ষেপনাস্ত্র মোতায়েন না করলে আমরাও তা করতোম না।