ছাত্রদলের কমিটি যে কোনো সময়

বিশেষ প্রতিনিধি

যে কোনো সময় কমিটি ঘোষণা হতে পারে ছাত্রদলের। একাদশ নির্বাচনের আগে এ কমিটি ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ভয়ে তখন পিছু হটে বিএনপির হাইকমান্ড। নির্বাচনের পরে গত ১৯ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপিকে পুনর্গঠন করাসহ নানা বিষয়ের ব্যাপারে কথা বলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমদ। তাদের এ দাবির পর দলের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। তারপর বিএনপির হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে পুনর্গঠন করার। এ সিদ্ধান্তের আলোকে গত এক সপ্তাহ আইনজীবী ফোরাম, ড্যাবের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়। একইভাবে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গতকাল সংশ্লিষ্টদের সংঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো গোছানো। সব পর্যায়েই দীর্ঘদিন ধরে থাকা অপূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো হালনাগাদ বা নতুন কমিটি করতে চায় দলটি। একটি পক্ষ ডাকসু নির্বাচনের আগে নতুন কমিটি করার পক্ষে। অন্য পক্ষ বলছে, ডাকসু নির্বাচনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা হোক। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের দ্রুত নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি চান সংগঠনটির কেন্দ্রীয়ও তৃণমূল নেতারা। এ দিকে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে বিএনপির হাইকমান্ড তৎপর রয়েছে। খুব দ্রুতই নতুন কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা।

universel cardiac hospital

২০১৪ সালে ঘোষিত ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর। এখন অপেক্ষাকৃত কম বয়সীর হাতে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব দিতে চান বিএনপির হাইকমান্ড। সম্প্রতি বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কেননা নতুন কমিটি হচ্ছে, হবে করেও অপেক্ষার শেষ নেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। নতুন কমিটি হচ্ছে-হবে করেই দুই বছর মেয়াদের কমিটি পাঁচ বছরে পা রেখেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ওপর সংগঠনের শীর্ষ অনেক নেতা অনাস্থা জানিয়েছেন অনেক আগে। বিএনপির প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের নতুন কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে যেমন হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বাড়ছে তেমনি নতুন কর্মী-সমর্থকও হারাচ্ছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি নতুন কমিটি গঠনের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপির নেতারা। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে নয়াপল্টন কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করে নতুন কমিটি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। প্রত্যুত্তরে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা আশ্বাসও দিয়েছেন।

২ বছরের কমিটি চলছে ৫ বছর: অন্যদিকে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত বছরের ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে রেখেও নতুন কমিটির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন ছাত্রদলের নেতারা। বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ নেতার ছাত্রত্ব না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এ কমিটি গঠনের পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। বর্তমান কমিটির শীর্ষ তিনজন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে পদ পেয়েছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ার জন্য জোর লবিংও করেন ছাত্রদলের শীর্ষ তিন নেতা। এসব কারণেই ছাত্রদল নেতারা সর্বস্তরে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন।

ছাত্রলীগের ছেয়ে পিছিয়ে ছাত্রদল: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের চেয়ে কমিটি গঠনের ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে ছাত্রদল। ২০১৪ সালে ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পর ছাত্রলীগের দুটি নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ছাত্রদল। এ নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলে ছাত্রদলকে গতিশীল করার কথা বলছেন।

ছাত্রদলের নতুন কমিটির শীর্ষ পদ পেতে আগ্রহী ছাত্রদলের প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক নতুন কমিটি না হলে পদপ্রত্যাশীদের মাঝে অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি হবে। সুতরাং আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের উচিত দ্রুত ছাত্রদলের নতুন কমিটি করা।

শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ: ছাত্রদলের সম্ভাব্য নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে চেষ্টা করছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। এদের মধ্যে রয়েছেন নাজমুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, আব্দুল ওহাব, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, ইখতিয়ার কবির, মামুন বিল্লাহ, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আসাদুজ্জামান আসাদ, মফিজুর রহমান আশিক, বায়েজীদ আরেফিন, নাহিদুল ইসলাম সুহাদ অন্যতম। এর বাইরেও শীর্ষ পদের জন্য চেষ্টা করছেন কাজী মোক্তার হোসেন, মেহবুব মাসুম শান্ত, মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া ও আরজ আলী শান্ত প্রমুখ। পদপ্রত্যাশীদের অনেকেই মিথ্যা ও রাজনৈতিক মামলায় জেলও খেটেছেন। ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক বায়েজীদ আরেফিন বলেন, সারা দেশে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতি দুই বছর বা আড়াই বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় নতুন নেতৃত্বের অধীনে কাজ করতে অভ্যস্ত। তাই আগে দরকার কেন্দ্রে গতিশীল নতুন নেতৃত্ব। তা না হলে আবার ছাত্রদলের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, ছাত্রদল হচ্ছে বিএনপির প্রবেশদ্বার। ছাত্রদলের নেতৃত্বেই আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব হয়েছিল। ছাত্রদলের আগামী নেতৃত্বের জন্য বিএনপির হাইকমান্ড তৎপর রয়েছে। তাদের নির্দেশ মতো সম্ভাব্য ছাত্রনেতাদের তালিকা যাচাই-বাছাইও হয়েছে। বিষয়টি দেখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার সময়ের ব্যাপারে ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত দিতে পারেননি তারা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে