কালো তালিকায় সৌদি আরব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যর্থ এমন উচ্চ ঝুঁকির দেশের তালিকায় সৌদি আরব ও পানামার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি)। সংস্থাটির এ নেমিং অ্যান্ড শেমিং (নাম উল্লেখ ও লজ্জা প্রদান) চর্চার বিরুদ্ধে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের চরম আপত্তি সত্ত্বেও এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

ইইউর কর্মকর্তাদের তথ্যমতে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে কালো তালিকাটির অনুমোদন দিতে চাইছে ইউরোপীয় কমিশন। অবৈধ অর্থপ্রবাহ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের মতো কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগে সৌদি আরবসহ আরো ২০টি দেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। রিয়াদকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত ইসির সঙ্গে ইইউর বড় সদস্য দেশগুলোর দ্বন্দ্ব আরো বাড়িয়ে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এ দেশগুলোর অভিযোগ, অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থার তুলনায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধে ইউরোপ অনেক বেশি কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তালিকা থেকে রিয়াদের নাম বাদ দিতে ব্রাসেলসের সঙ্গে দেনদরবার করছে খোদ সৌদি সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মিত্রদেশগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইইউর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ তালিকার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য সদস্য দেশগুলোর হাতে অনেক সময়ই রয়েছে। কিন্তু তারা শুধু সৌদির কারণেই জাগ্রত হচ্ছে।’ তবে এ প্রসঙ্গে ব্রাসেলসে নিয়োজিত সৌদি কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করেননি।

চলতি সপ্তাহে ইইউ রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকে খসড়া কালো তালিকা নিয়ে চরম সমালোচনা করেন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম ও গ্রিসের প্রতিনিধিরা। একটি কূটনীতিক গোপন নোট দেখে এ কথা জানিয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

এদিকে কমিশনের পরিকল্পনা নিয়ে ‘চরম উদ্বেগ’ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশগুলোকে এ কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আগে আরো পরামর্শ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা। অন্যদিকে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযুক্ত দেশগুলোকে শনাক্ত করা এক ধরনের ‘কৌশলগত চর্চা’ এবং এটি ‘অনেকটাই রাজনৈতিক’।

সংস্থার প্রভাবশালী দেশগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও সৌদি আরবের নাম অন্তর্ভুক্ত রেখেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসি প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার এবং সংস্থাটির বিচারসংক্রান্ত কমিশনার ভেরা জোরোভা। আগামী সপ্তাহে খসড়া তালিকায় কমিশনাররা স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভোট স্থগিত রেখে তালিকাটির অনুমোদন আটকে দিতে ইইউর বিভিন্ন সরকার ও এমপিদের হাতে ৩০ দিন সময় রয়েছে। তবে এ ধরনের কোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কর্মকর্তা।

ব্রাসেলসের পার্লামেন্টে গ্রিন পার্টির এমইপি সভেন জিগোল্ড বলেন, ‘কালো তালিকাটি খুবই প্রয়োজন। সদস্য রাষ্ট্রগুলো কখনই এটি বাতিল করতে পদক্ষেপ দেবে না।’ তবে সদস্য দেশগুলোর কূটনীতিবিদরা বলছেন, তাদের আপত্তির জায়গাটি শুধু সৌদি আরবকে রক্ষার জন্য নয়, বরং কমিশন কীভাবে এ ২৩টি দেশকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচন করেছে, সে বিষয়টি থেকেই এ উদ্বেগ।

ব্রাসেলসের প্রণীত তালিকাটি মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়ন বন্ধে নিবেদিত আন্তঃসরকার সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের তালিকার দ্বিগুণ। ইইউর এক কূটনীতিবিদ বলেন, ‘তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া ও সারমর্ম নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।’

আরো যে ক’টি সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডস ও আমেরিকান সামোয়াও রয়েছে। তবে এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

এদিকে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের তালিকায় ইরান ও শ্রীলংকাসহ মোট ১৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ তালিকায় নামিদামি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িত পানামার নাম না থাকায় এর কড়া সমালোচনা করেছেন ইইউর আইনপ্রণেতারা। তবে ইইউর খসড়া তালিকায় পানামার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এ নিয়ে নিন্দা জানিয়েছে পানামা। এ পদক্ষেপকে ‘চরম মাত্রায় অন্যায্য’ এবং ‘গভীরতর হতাশার’ উৎস হিসেবে অভিহিত করেছে তারা। পানামার পক্ষ থেকে ইউরোপীয় কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বলা হয়, যেসব দেশ এক্ষেত্রে উন্নতি করার চেষ্টা করছে তাদের নিশানা করেই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।

ইইউর খসড়া তালিকাটিতে রাশিয়ার নাম নেই, তবে বিষয়টি পর্যালোচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইইউর কর্মকর্তারা। ইইউ যেসব মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে থাকে তার মধ্যে ব্যাংকিং নীতিমালা, করপোরেট মালিকানায় স্বচ্ছতা, মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থায়নের শাস্তিগুলো উল্লেখযোগ্য।

গত বছর ইসির পক্ষ থেকে এ তালিকা প্রণয়নের প্রক্রিয়া অন্যান্য সংস্থার তুলনায় আরো ‘স্বচ্ছ’ ও ‘গতিশীল’ করে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ইসির ভেরা জোরোভা বলেন, ‘সদস্য রাষ্ট্র ও তৃতীয় দেশের সঙ্গে দুর্বল সংযোগগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। আমরা ইউরোপকে অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টিকারী নোংরা অর্থের ক্ষেত্র হতে দিতে পারি না।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে