ট্রাফিক সপ্তাহ, ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ ও বিশেষ অভিযান- কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। তাই জনসাধারণের একটু স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে এবার রাজধানীতে নির্মিত হচ্ছে আলাদা একটি উড়াল সড়ক। সম্ভাব্য হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ উড়াল সড়কে আর্টিকুলেটেড (দুই বগি জোড়া লাগানো) বাস চলাচল করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে প্রধান হচ্ছে মহাখালী-বিমানবন্দর সড়ক। এ রুটে যানজট কিংবা সিগন্যালে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকা যেন নিত্যসঙ্গী। ফলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এ সড়কে চলাচলকারী লাখও যাত্রীর। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত প্রবাসী কিংবা বিদেশিরাও বিমানবন্দর থেকে এ সড়কে নেমে যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন।
এ ভোগান্তি দূর করতে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কে পৃথক বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মিত হবে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে আলাদা লেন হয়ে এটি মিলবে মূল উড়াল সড়কের সঙ্গে। বর্তমানে যে ফ্লাইওভার আছে সেটিও থাকবে। এর পূর্বপাশ দিয়ে নতুন ফ্লাইওভারটি নির্মিত হবে।
‘ঢাকা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে নকশা চূড়ান্ত এবং মূল প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই কাজও শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) কাজ শেষ হবে।
এজন্য কনসালটেন্সি ব্যয় নির্ধারণ হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা। এরপরই হাতে নেয়া হবে মূল প্রকল্পের কাজ। হাজার কোটি টাকা খরচের ইস্টিমেট (প্রাক্কলন) ধরা হয়েছে। এটি কম বা বেশিও হতে পারে।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সড়কের উভয় পাশে দুই লেনের ডেডিকেটেড বিআরটি লেন নির্মিত হবে। এ লেন দিয়ে শুধু আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস চলবে। দুটি কোচ জোড়া দিয়ে বানানো এ বাসের দৈর্ঘ্য হবে ১৮ মিটার। সাধারণ বাসের চেয়ে এর যাত্রীধারণ ক্ষমতা হবে দ্বিগুণ। প্রায় দেড়শ যাত্রী একটি বাসে চলাচল করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্মার্টকার্ড ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা হবে এ বাসে। ডেডিকেটেড রুটে থাকবে সাতটি স্টপেজ। বাসগুলো কয়েকটি নির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
এ রুটে তিন মিনিট পরপর বাস পাওয়া যাবে। থাকবে ইলেকট্রনিক ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও।
‘ঢাকা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট’ নামের নতুন এ প্রকল্পের পরিচালক সানাউল হক বলেন, প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের সব প্লান জমা দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন মিললে তখন আমরা কনসালটেন্ট (পরামর্শকারী) নিয়োগ দেব।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী বলা যায়, মহাখালী ফ্লাইওভারকে কোনো ডিস্টার্ব না করেই নতুন উড়াল সড়কটি হবে। নতুন ফ্লাইওভার বনানী সেতু ভবন থেকে শুরু হয়ে নামবে মহাখালী বাস টার্মিনালে। মূলত বাস চলাচলের লেনের জন্যই এমন উদ্যোগ নেয়া।
সানাউল হক বলেন, নানা কারণে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত বিআরটি রুট করা হবে। পৃথক রুটে আধুনিক আর্টিকুলেটেড বাস চলবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে যানজটও কমে আসবে। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখনও জমির অধিগ্রহণ শুরু হয়নি। কারণ প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পটি পাস হবার পর বনানী সেতু ভবন থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা হবে।