বাকের ভাই ও মুনা আপা আজ এমপি

বিনোদন ডেস্ক

বাকের ভাই ও মুনা আপা। ছবি : সংগৃহিত

বাকের ভাই ও মুনা আপা হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের রচনায় বরকত উল্লাহ্‌র পরিচালনায় পরিচালিত ধারাবাহিক ‘কোথাও কেউ নেই’ এর প্রধান ও বিশেষ চরিত্র।

‘কোথাও কেউ নেই’ ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর এবং মুনা আপা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা।

বাকের ভাই গুণ্ডা প্রকৃতির লোক এবং তার সঙ্গী ছিল ‘বদি’ আর ‘মজনু’, তারা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে চলাফেরা করতো। অধিকাংশ সময় মোটর সাইকেল চালাতো মজনু, বদি বসতো পিছনে, বাকের ভাই বসতো মাঝে।

বাকের ভাইয়ের একটা মুদ্রাদোষ ছিল, সে একটা চেইন হাতের তর্জনিতে অনবরত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচাতো, আবার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচ খুলে আবার প্যাঁচাতো। সক্রিয় ডায়লগ না থাকলে প্রায়ই তাকে এরকম করতে দেখা যেত।

বাকের ভাইকে পছন্দ করতো ‘মুনা’। মুনা এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সে চাকরি করেন এবং তার মামাতো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করেন।

বাকের ভাই এলাকার মাস্তান হলেও অধিকাংশ মানুষ তাকে ভালোবাসতো, কারণ সে ছিল সত্যের পূজারী— নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে যেমন কুণ্ঠিত হতো না, তেমনি সমাজের অন্যায়কেও মুখ বুজে মেনে নিত না, নিজের গুণ্ডাদের দিয়ে তা কঠোর হস্তে দমন করতো।

ঘটনাপ্রবাহে বাকের ভাই রেবেকা হক নামের এলাকার প্রভাবশালী এক নারীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। ঐ নারী তার বাড়িতে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন, বাকের ভাই তা জানতে পেরে প্রতিবাদ করেন।

সেই প্রভাবশালী নারী তার বাড়িতে কুকুর পালন করতেন বলে বাকের ভাই তাকে কুত্তাওয়ালী বলতেন। এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে ‘কুত্তাওয়ালীর’ দারোয়ান তার বাড়িতে খুন হয়। ফাঁসানোর জন্য এই খুনের দায় দেয়া হয় বাকের ভাইকে, সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় কুত্তাওয়ালী’র সাজানো সাক্ষী এলাকার নব্য ছিনতাইকারী মতি।

যদিও পদে পদে মতির মিথ্যা সাক্ষ্য বাকের ভাইয়ের উকিল ধরিয়ে দিচ্ছিলেন আদালতের কাছে, কিন্তু এদিকে বাকের ভাইকে ফাঁসানোর জন্য কুত্তাওয়ালী লোভ দেখিয়ে বাকের ভাইয়েরই সাগরেদ বদিকে হাত করে নেয়।

একপর্যায়ে যখন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবার আশংকা প্রবল হয়ে উঠে, উকিল হুমায়ূন ফরিদি শত চেষ্টা সত্ত্বেও খেই হারিয়ে ফেলছেন সেই কেসে, তখন দর্শকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে; চলতে থাকে মিছিল, দেয়াল লিখন, সমাবেশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন মিছিল করে স্লোগান দিতে থাকে:

‘বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন, কুত্তাওয়ালী জবাব চাই’

কিংবা,

‘বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’

১৯৯৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয় বাকের নামে একজন মাস্তানের। নাটকে তার এই ফাঁসি দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দর্শকদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

উপমহাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাহিত্যিক কর্ম বা সাহিত্য থেকে উঠে আসা কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে নানা সময়ে আলোড়ন দেখা গেলেও বাকের ভাইয়ের ফাঁসি দেয়ার ঘটনাকে ঘিরে দর্শকদের মাঝে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল তাকে এর সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনই মনে করছেন বিরল এবং বিস্ময়কর।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রদর্শিত এই টিভি ধারাবাহিক এতোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, ধারাবাহিকটির প্রতিটা পর্ব, দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করতেন। ধারাবাহিকের অগ্রগতির সাথে সাথে দর্শকরা বাকের ভাইকে পছন্দ করে ফেলেন এবং বাকের পক্ষে জনমত গড়ে উঠে।

এই নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে আসাদুজ্জামান জনপ্রিয়তা পাওয়ায় নির্বাচনের সময় তার দলের কর্মীরা নীলফামারী এলাকায় বাকের ভাইকে ভোট দিতে বলেন।

এবং এবার জাতীয় সংসদ সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪১ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ মনোনয়ন দেয়া হয়। এতে জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাও এমপি হন।  

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে