মেট্রোরেল : সামাল দেয়া যাচ্ছে না যানজট

বিশেষ প্রতিবেদন

মেট্রোরেল প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হওয়ায় বাসের মতো গণপরিবহনের চলার পথ বদলে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৩৭৭টি পিলারের ওপর ৩৭৬টি স্প্যান বসে বিস্তৃত হবে ২০ কিলোমিটারের মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রথম অংশে প্রায় ১২ কিলোমিটার রয়েছে আগারগাঁও পর্যন্ত। প্রকল্পের এই অংশের কাজ অনেকটা এগুলেও ২০২০ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কী না সেটা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। বলা হচ্ছে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালে। প্রকল্পের কাজের জন্য সরু হয়ে গেছে সড়ক। আট লেনের প্রধান সড়ক কমে হয়ে গেছে চার লেনে। প্রকল্পের কাজের জন্য সরু হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

দ্বিতীয় অংশের কাজ শুরু হওয়ায় ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায় ভাবনায় পড়েছে ট্রাফিক কর্তৃপক্ষ।

রাজধানীর আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার এলাকার সার্ক ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কের অনেক অংশে বিভাজক তুলে ফেলা হয়েছে। বসানো হয়েছে কংক্রিটের বেষ্টনী। শতাধিক রুটের বাস চলছে বিকল্প পথে। বিকল্প সড়কে চলবে প্রাইভেট কার। খেজুরবাগান-খামারবাড়ি সড়ক বন্ধ হতে পারে। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগারগাঁও-ফার্মগেট থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কটি প্রস্থে প্রায় ২২ মিটার। এর মধ্যে সড়কের দুই পাশের মধ্যবর্তী ১১ মিটার অংশে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলবে। ফলে ২২ মিটারের সড়ক ১১ মিটারে নেমে আসছে। 

গাবতলী ৮ নং বাসের চালক হেদায়েত বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হবে ততদিন এই যানজট থাকবেই। আমার বাসের মালিকের প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা ৫টি। ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রী প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা গাড়ি আছে। ঢাকা শহরের মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি। যতদিন পর্যন্ত না এই গাড়ির সংখ্যা কমানো হবে ততদিন মেট্রোরেল কিংবা গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেও যানজট কমবে না। 

চালক ইউসুফ বলেন, মেট্রোরেল তৈরি হলে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা সুবিধা হবে। এর আগে হয়তো কিছুদিন যানজটের সমস্যা পোহাতে হবে। তবে মেট্রোরেল চালু হলে আশা করি যানজট কমবে। খামার বাড়ি সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় এখন সাইন্সল্যাব ও শাহবাগ ঘুরে মতিঝিল যেতে হয়। ফার্মগেট, কাওরান বাজার এবং বাংলামোটরগামী যাত্রীরা অনেকেই এটা জানে না। তাই সংসদ ভবন মোড়ে তাদের নামিয়ে দিলে অনেক যাত্রী বিরক্তি প্রকাশ করে।  
বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, কবে মেট্রোরেল হবে আর কবে আমরা তার সুফল ভোগ করবো জানি না। তবে মেট্রোরেল চালু হলেও জিরো পার্সেন্ট যানজট কমার সম্ভাবনা নাই। একদিকে যেমন খুব তাড়াতাড়ি এটার কাজ শেষ হবে না। একইভাবে মেট্রোরেল হলেও খুব একটা ভালো হবে না।  

রুট পরিবর্তন করায় গাবতলী থেকে মতিঝিল বা সদরঘাটমুখী বাস ফার্মগেটের পরিবর্তে সাইন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব যানবাহনে করে আসা ফার্মগেট ও কাওরান বাজারের যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। অন্যদিকে রামপুরা, মালিবাগমুখী যানবাহন ফার্মগেটের পরিবর্তে বিজয় সরণি, সাত রাস্তা হয়ে যাচ্ছে। এতে এ রুটের যাত্রীরাও বিপাকে পড়েছেন। ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ফার্মগেট থেকে শাহবাগমুখী সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

কাওরান বাজার সিগনালের দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, রুট পরিবর্তন করা হয়েছে মূলত বড় গাড়ির জন্য। বড় গাড়িগুলো এসব রাস্তায় ঢুকলে লম্বা যানজট দেখা দেয়। শুধুমাত্র জ্যাম কমাতে এটা করা হয়েছে। এর ফলে যানজট কম হবে। তবে মেট্রোরেল প্রকল্প শেষ হতে দুই বছরেও বেশি সময় লাগবে। এখনতো শুধুমাত্র প্রাথমিক কাজ চলছে।

বাংলামোটর সিগনালের ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, মেট্রোরেলের কাজের জন্য রুট পরিবর্তন হওয়াতে সাধারণ মানুষ অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই জানে না তার কাঙ্ক্ষিত বাসটি কোন রুট হয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প সম্পন্ন হলে যানজট কতটুকু কমবে সেটা এখনো ওভাবে বলা যাচ্ছে না। দেখা যাক কি হয়। তবে আশা করছি ভালো কিছু হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে