চকবাজারে আগুন : এটাকে দূর্ঘটনা বলা যাবে না

ডেস্ক রিপোর্ট

ছবি : সংগৃহিত

রাজধানীর চকবাজারের আগুনে ৬৯ জনের নিহতের ঘটনায় করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, নিমতলীর ঘটনায় তদন্ত কমিটির ১৭ দফা সুুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ছিল সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। এখন চকবাজারের ঘটনায় দায় না নিয়ে এক অপরকে দোষারপ করছেন। কাউকে না কাউকে তো দায় নিতেই হবে। 

পৃথক তিনটি রিট আবেদনের শুনানিতে সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কারুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরে আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটায় তিনটি রিট আবেদনের ওপর শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা আরেকটি রিট আবেদনেরও শুনানি হবে এ বেঞ্চে। 

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুনে নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন, নিহতের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া, রাসায়নিক গুদাম অন্যত্র সরাতে রোববার পৃথক চারটি রিট আবেদন করা হয় হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়।

রিট আবেদনকারী হলেন-সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ, আইনজীবী জেড আইন খান পান্না, ব্যারিস্টার নূর মোহাম্মদ আজমী এবং খন্দকার মো. সায়েদুল কাউছার, পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. জাবেদ মিয়া।

তিনটি  রিটের শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সময়ের আরজি পেশ করে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। সরকার নিমতলীর পর করা সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিক। রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ, আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত ও ব্যারিস্টার মো. রিয়াজউদ্দিন।
তখন আদালত বলেন, নিমতলীর ঘটনার পর যে সুপারিশ ছিল, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে চকবাজারে এই দূর্ঘটনা ঘটতো না। 
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকার এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক।

আদালত বলেন, আন্তরিক হয়ে লাভ নেই। মানুষতো চলে গেছে। আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী নিজেই চকবাজারের ঘটনা তদরকি করেছেন, সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিয়েছেন। এ সময় বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, তিনি তো একা দেশ চালাতে পারবেন না। এই যে সুপারিশ বাস্তবায়ন এটা বাস্তবায়ন করা প্রশাসনের কাজ। 

আদালত বলেন, ওই সব এলাকার বাড়ির মালিকরা তিনগুণ বেশিতে রাসায়নিক গুদামের জন্য ভাড়া দেন। আর নিজেরা থাকেন গুলশানে। মারা যায় গরিব মানুষ। সিটি কর্পোরেশন দেখেও না দেখার ভান করে। যারা যে মানুষ মারা গেল তাদের কি দোষ?
আদালত আরও বলেন, পত্রিকায় দেখেছি, সুপারিশ বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এটা বাস্তবায়ন করা তাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা জানিনা তারা কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা। পদক্ষেপ না নিলে ধরে নিতে হবে তাদের অবহেলা ছিল।

আদালত বলেন, পুরান ঢাকার রাস্তা দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারে না। ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে না হয় কিছু হবে না। কিন্তু ৭ থেকে ৮ মাত্রায় ভূমিকম্প হলে কোন বিল্ডিং থাকবে না। এ ধরনের ভুমিকম্প হলে কাউকে উদ্ধার করারও কেউ থাকবে না।
আদালত বলেন, চকবাজারের আগুনের ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। এটাকে দূর্ঘটনা বলা যাবে না। এটা অবহেলা। এর দায় কাউকে না কাউকে নিতে হবে। একজন দায়িত্বশীল আরেকজনের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন এটা ঠিক না।

আদালত আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতি অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা দেশের ইমেজ নষ্ট করে দিচ্ছে।  
এ সময় একটি রিটের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আদালতকে বলেন, নিমতীলর ঘটনায় কমিটি যে সুপারিশ করেছিল তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় চকবাজারের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিনি আদালতকে চকবাজারের ঘপনায় হস্তক্ষেপ করতে আরজি জানান। 
আদালত বলেন, নিমতলীর ঘটনায় এর আগেও আদেশ হয়েছে। তারা আসতে পারতেন। তারা কিন্তু আসেননি। 
রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন সড়কে শৃঙ্খলার বিষয়েও আদালত হস্তক্ষেপ করেছেন। আদালত বলেন, আপনারা সবগুলো রিট এক সঙ্গে নিয়ে আসেন আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) দুপুর দুইটায় আমরা শুনবো।

বেলা আড়াইটায় আইনজীবী জেড আই খান পান্নার করা রিট আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে। রিট আবেদনকারী জেড আইন খান পান্না বলেন, ঢাকা বসবাসের অযোগ্য। হাটার জায়গাও সংকুচিত। আদালত বলেন, একই বিষয়ে আরো কয়েকটি রিট হয়েছে। সবগুলোর এক বেঞ্চে শুনানি হলে ভাল হবে। না হলে সাংঘর্ষিক আদেশ হবে। এরপর আদোলত এ রিট আবেদনটি আগের তিনটি রিটের বেঞ্চে একত্রে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে