নাটকীয়ভাবে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে। আজ র্যাবের পাঠানো এ খুদে বার্তায় দাবি করা হয়েছে, ওই ব্যাক্তির নাম পলাশ আহমেদ। র্যাবের সংরক্ষিত তথ্য অনুয়ায়ী তার একজন অপরাধীর সঙ্গে মিলে যায়। তার বাবার নাম পিয়ার জাহান সরদার। সোনারগাঁওয়ের পিরিজপুরে তাদের গ্রামের বাড়ি। বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টায় যুক্ত যুবকের নাম গণমাধ্যমে মাহাদী হিসেবে এলেও তার পারিবারিক নাম পলাশ আহমেদ। ফেইসবুক আইডিতে লেখা আছে মাহাদী জাহান। মো. পলাশ আহমেদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে চিত্রনায়িকা সিমলার নাম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য ছবি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সিমলার সঙ্গে।
গতকাল পলাশ আহমেদের বাবা পিয়ার জাহান বলেছেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে সিমলা নামে এক মেয়েকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। বিয়ের কথা শিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়।’
সোমবার সকালে সোনারগাঁও সদর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে পলাশ আহমেদের বাড়িতে তার বাবা পিয়ার জাহানের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি বলেন, আমরা শিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস থেকে আমার পাঠানো টাকা সে নানা পথে খরচ করেছে।
তিনি জানান, সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়া আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে। রোববার চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশের মৃত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে জানান তিনি। সোনারগাও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রোববার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ছবি পলাশের বলে নিশ্চিত করে। রোববার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের দুবাইগামী ওই উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সেনা কমান্ডোদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী মাহমুদ পলাশ।
কিন্তু চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, পলাশের নিহতের সংবাদে শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছে। সোমবার সকালে পলাশের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পলাশের ছবি নিয়ে তার বাবা পিয়ার জাহান ও মা রীনা বেগম শোকে কাতর।
পলাশের বাড়িতে ১১টি ঘর। তারই একটিতে বসে কথা হয় বাবা পিয়ার জাহানের সঙ্গে। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পলাশ তার একমাত্র ছেলে। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে জান্নাত নামে চার বছরের আরেকটি মেয়ে আছে।
পিয়ার জাহান বলেন, ১৯৯০ সালে কাজের উদ্দেশ্যে তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে চার বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন।
পরে তিনি আবার সৌদি আরব চলে যান। ২০১২ সালে তিনি দেশে ফেরেন।
তিন বলেন, এর মধ্যে ছেলে পলাশ মাহমুদ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। দাখিল পাস করে সে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। শুনেছি পলাশ নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছিল। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশত না, কথা বলত না।
তিনি বলেন, আমরা সিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল।
সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।