মৃত্যুর ৫ দিন আগেও ফুটবলার সোহেল রানাকে তার স্ত্রী আফরিন বলেছিলেন, আফরানের আব্বু, তুমি এত ভালো খেলো; কিন্তু জাতীয় দলে জায়গা পাওনা। তোমাকে কিন্তু জাতীয় দলে খেলতেই হবে একবার। এটা আমাদের চাওয়া।
সোহেল যখন জাতীয় দলে ডাক পেলেন তখন তার স্ত্রী-পুত্র আর পৃথিবীতে নেই, চলে গেলেন দূর থেকে বহুদূরে। যেখান থেকে আর কেউ ফিরে আসে না। জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাওয়ার খরবটিও তাদের কাছে পৌছাঁনো যাবে না।
গত বছর ২৪ নভেম্বর নিজ বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে সাভারের নবীনগর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুপুত্র আফরানসহ নিহত হন সোহেল রানার স্ত্রী আফরিন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ফুটবলার সোহেলও।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সোমবার ঘোষণা করেছে, কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য জাতীয় দলের ২৭ সদস্যের প্রাথমিক তালিকা। যে তালিকায় আছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এই মিডফিল্ডারও। নিজের নামটি আছে জানার পর থেকেই অকালে চলে যাওয়া স্ত্রী আর ৩ বছরের ছেলের স্মৃতিই বেশি মনে পড়ছে সোহেল রানার।
শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে এখন সিলেট রয়েছেন সোহেল রানা। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আবেগ আটকে রাখতে পারেননি ২০১০ সাল থেকে পেশাদার ফুটবলে খেলা এই মিডফিল্ডার।
কোনোমতে আবেগ সামলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমার জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে যার আশা বেশি ছিল সেই এখন বেঁচে নেই। আজ এমন খুশির দিনে তাদেরই যে বেশি মিস করছি! মনের ভেতর আরো বড় করে জেগে উঠছে আমার স্ত্রী-পুত্রের কথা।
ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালের পর ঢাকার বসুন্ধরার বাসা থেকে স্ত্রী আর পুত্রকে নিয়ে ছুটি কাটাতে মানিকগঞ্জে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন সোহেল রানা। ২৪ নভেম্বর নিজের মটর সাইকেলে তাদের নিয়ে ফিরছিলেন ঢাকায়। ফেরার পথে সাভারের নবীনগর এলাকায় একটি ঘাতক মাইক্রোবাস কেড়ে নেয় সোহেল রানার সব কিছু। নিজে বেঁচে গেলেও ঘটনাস্থলেই চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলেন স্ত্রী আর পুত্র সন্তানকে।
২০১০ সালে ফেনী সকার ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক। তারপর মোহামেডান, ব্রাদার্স, মুক্তিযোদ্ধা ও চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে এ বছর ব্লু জার্সিতে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। নিজের ওপর আস্থা ছিল সোহেল রানার। এই ঢুকবো জাতীয় দলে…, এটা ভেবে ভেবে এক সময় আশা ছেড়েও দিয়েছিলেন।