একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মোকাব্বির খান আগামী ৭ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্পিকার বরাবর শনিবার চিঠি দিয়েছেন তারা। সংসদ সচিবালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শপথ নিতে যাওয়া দুই সাংসদও গণমাধ্যমকে তা নিশ্চিত করেছেন।
এবারের নির্বাচনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ মৌলভীবাজার-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। আর মোকাব্বির খান গণফোরামের দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা দুজনই কামাল হোসেনের গণফোরামের স্থায়ী কমিটির সদস্য।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলেও দলীয় সিদ্ধান্তে এতদিন শপথ নেননি এই দুই নেতা। তবে এবার তারা দল এবং জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত রয়েছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোট থেকে নির্বাচিত আটজনের কেউই শপথ গ্রহণ করবেন না। জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ গ্রহণ করলে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথাও জানিয়েছে গণফোরাম।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনো ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনো নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।
দলের দুই নেতার শপথ নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) এখন পর্যন্ত শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে বহাল আছি। এখন কেউ সেই সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ গ্রহণ করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি বহিষ্কারের নিয়ম হয়, তাহলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে।
শপথ নিয়ে মনসুর-মোকাব্বির যা বললেন :
শপথের বিষয়ে আজ শনিবার সুলতান মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, ৭ মার্চ দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন, তাই শপথের জন্য এই দিনকেই বেছে নিয়েছি।
শপথ কি দলের সিদ্ধান্তে নিচ্ছেন? জানতে চাইলে মনসুর বলেন, সেটা প্রয়োজন পড়ে না। আমি যে এলাকা থেকে নির্বাচন করেছি, আমার এলাকার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। সেই দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই আমাকে শপথ নিতে হচ্ছে। সবার আগে জনগণের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড কামাল হোসেনের নলেজে আছে আমাদের শপথের বিষয়।
আপনারা শপথ নিলে ঐক্যফ্রন্টে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে না? জানতে চাইলে সুলতান মনসুর বলেন, কেন হবে? কোন ধরনের সমস্যা হবে না। আমিতো ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলাম। ভাসানীর মার্কা ছিল ধানের শীষ। এরপরে বিএনপির, সেটা এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মার্কা হয়। ঐক্যফ্রন্ট কী ভাবলো সেটা বিষয় নয়, সংসদীয় এলাকার লোকজন কী বলে সেটাই বিষয়। জনগণকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মোকাব্বির খান বলেন, আমি জাতীয় সংসদের নির্বাচিত এমপি। আগামী ৭ মার্চ শপথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আমাদের শপথ নেয়ার বিষয়ে দল ইতিবাচক। শপথের বিষয়ে আমাদের দলের সভাপতির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে। দলের দুই একজন ছাড়া সবাই শপথের বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যদি শপথ নেন, তবে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সে বিষয়ে কী ভাবছেন? জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, আমরা দলের সিদ্ধান্তেই শপথ নেব। সেখানে বহিষ্কারের কোনো প্রশ্ন আসে না। আমি তো দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার। কেউ একজন চাইলেই তো আমাকে বহিষ্কার করা যাবে না।
শপথ নেয়ার বিষয়ে স্পিকারকে চিঠি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী ৭ মার্চ শপথ নেব আমরা। সেই কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।