পাকিস্তানে আটক হওয়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের আরও একটি ভিডিও প্রচার করেছে পাকিস্তান।
শুক্রবার দেশটির জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে গত বুধবার তার বিমান ক্রাশ হওয়া এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে শোনা যায় তাকে।
ভিডিওতে তিনি বলেন, আমি উইং কমান্ডার অভিনন্দন। আমি ভারতীয় বিমানবাহিনীর ফাইটার জেটের একজন পাইলট। আমি টার্গেট খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আপনাদের (পাকিস্তানের) এয়ারফোর্স আমাকে ভূপাতিত করে। এরপর আমার বিমানটি ছাড়তে হয়, যেটি ভেঙে গিয়েছিল। আমি বিমান থেকে বের হয়ে যাই। বের হওয়ার পর আমি প্যারাসুট খুলি। আমি যখন নিচে পড়ি তখন আমার কাছে পিস্তল ছিল।
তিনি বলেন, নিচে নামার পর দেখি সেখানে অনেক লোক। নিজেকে বাঁচানোর আমার কাছে একটাই রাস্তা ছিল- আমি আমার পিস্তল ফেলে দেই এবং পালানোর চেষ্টা করি। মানুষ আমার পিছু নেয়। তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিল। ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দুই সদস্য সেখানে আসেন। তারা আমাকে সেখান থেকে বাঁচান। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ক্যাপ্টেন আসেন। উনি আমাকে এই লোকদের হাত থেকে রক্ষা করেন। আমার সঙ্গে আর কিছুই হতে দেননি তিনি। এরপর উনি আমাকে নিজের ইউনিটে নিয়ে যান। যেখানে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে আমার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং আমাকে আরও চিকিৎসা দেয়া হয়।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে অভিনন্দন বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী খুবই পেশাদার বাহিনী। আমি এখানে শান্তি দেখেছি। আমি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সময় কাটিয়েছি এবং আমি অভিভূত।
এ সময় তাকে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনাও করতে দেখা যায়।
এরমধ্যেই আটক অভিনন্দনের দু’টি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান সিআরপিএল। একটি ভিডিও তাকে আটকের সময়কার এবং অপর ভিডিওটি দেখা যায়, পাকিস্তানি এক সেনাসদস্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
এরপর গতকাল শুক্রবার অভিনন্দনকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করার আগে আরো একটি ভিডিও প্রকাশ করে পাকিস্তান। যেখানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করার পাশাপাশি নিজ দেশের সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করতে শোনা যায় অভিনন্দনকে।
এদিকে প্রায় ৫৮ ঘণ্টা পর দেশের মাটিতে পা রেখেছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে তাকে নিয়ে দেশে ফেরেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ে ওয়াঘা সীমান্তে নিয়ে আসা হয় অভিনন্দনকে। সেখানে মেডিকেল চেকআপ করা হয় তাকে। এরপর পাকিস্তানি রেঞ্জার্সের ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’-এর পরই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় অভিনন্দনকে। তবে, কিছু প্রক্রিয়া সারতে দেরি হওয়ায় তার দেশে ফেরা বিলম্বিত হয়।
এ দিন সকালে ইসলামাবাদ থেকে সড়কপথে তাকে লাহোর নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিয়ে আসা হয় ওয়াঘা-আতারি সীমান্তে। অভিনন্দনকে স্বাগত জানাতে বিকেলেই হাজির হন ভারতীয় সেনা ও এয়ারফোর্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আর ছেলেকে গ্রহণ করতে সকালেই সীমান্তে পৌঁছে যান অভিনন্দনের বাবা এয়ার মার্শাল এস বর্তমান এবং মা শোভা বর্তমান।
বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে অভিনন্দনকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, শান্তিপ্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যেতেই এই উদ্যোগ।
আর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের এ পদক্ষেপের ভিন্ন অর্থ দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, জেনেভা কনভেনশন অনুসারে তাকে ছাড়া হচ্ছে। এতে সমঝোতা বা অন্য কোনো বিষয় নেই।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর সূত্রে ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান।
এদিকে পাকিস্তানের ডন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বৈমানিককে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণার পর পাকিস্তানের সব দল ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশংসা পেয়েছেন। এ ছাড়া ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ায় ইমরান খানকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান।
আর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। সেই অধিবেশনেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দেন।