সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জিনাত আরা বলেছেন, নারীমুক্তির প্রধান বাধা যদি হয় পুরুষ, তবে নারীমুক্তির পথপ্রদর্শকও পুরুষ।
আজ শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় জিনাত আরা এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তেব্যে বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি সংবিধানের ১৯ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না এবং ২৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে, নারী পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারী সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারী নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান যুগ গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। উন্নয়নের গতিধারায় আজকে বাংলাদেশের নারীরা যেভাবে উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের সমর্পণ করেছে, তা যেমন সমৃদ্ধির নিয়ামক আবার তা অর্থনীতির অগ্রযাত্রারও চালিকাশক্তি। তারপরও নারীরা এখনো বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। পরিবারের মধ্যে কর্মস্থলে, পরিবহন, যাতায়াত ব্যবস্থায় বিভিন্নভাবে নানা রকম হয়রানি ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। নারী দিবস উদযাপন করে এসব অবস্থার উন্নতি করা না গেলেও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন অনেক হ্রাস পেয়েছে। নারীর নিরাপদ কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা, মজুরি ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিত করা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। সারা বিশ্বে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজ সর্বত্র নারীর জয় জয়কার শুরু হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষায়, সাহসিকতায়, খেলাধুলায়, সৃষ্টিশীল কাজে বাংলাদেশের নারীরা আজ সামনের কাতারে। আমাদের নারীগণ আজ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে উচ্চপদে সমাসীন।
নারীর ক্ষমতায়নে সর্বাগ্রে পুরুষ সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই যে যার অবস্থান থেকে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করি। নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির পথ সুগম হলেই শুধু এ দিবস তার স্বার্থকতা খুঁজে পাবে।
দক্ষিণ বাংলা নারী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামসহ প্রমুখ।