ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে তথ্য সূত্রে জানা গেছে, জনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটের (জেএসসি) বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের নতুন সিলেবাসে বাংলায় গদ্য-কবিতা, ব্যাকরণ, সহপাঠী পাঠ কমানো হয়েছে। ইংরেজিতে তিনটি ইউনিট কমানোসহ মোট ৩৩ শতাংশ কমানো হয়েছে।
নতুন সিলেবাসে দেখা যায়, সাধারণ ৯ বোর্ডের অধিনে আয়োজিত জেএসসি পরীক্ষায় বাংলা-ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা ও নম্বর কমানের পর নতুন করে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।
সেখানে মুস্তাফা মনোয়ারের লেখা শিল্পকলার নানা দিক গদ্য বাদ দেয়া হয়েছে। কবিতা থেকে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘প্রার্থী, বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’এবং সুফিয়া কামালের লেখা ‘জাগো তবে অরণ্য কন্যারা’ বাদ দেয়া হয়েছে।
ব্যাকারণ থেকে বহুবচন গঠনের নিয়ম ও উদাহরণ, শ্রেণি বিভাজন, নির্দেশক, সর্বনামের দিক, শব্দগঠনের প্রাথমিক ধারণা, অভিধান, ভক্তি, সকর্মক ও অকর্মক ক্রিয়া, ক্রিয়ার কাল, নিসর্গকরণ, একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করে ব্যাখ্যা ও বচনা, বাক্য রচনা, নির্মিত অর্থ, অনুচ্ছেদ, অনুধাবনসহ সহপাঠী বিষয়গুলো বাদ পড়েছে।
অন্যদিকে, ইংরেজি বিষয়ে ‘ইংলিশ ফর টুডে’বইয়ের ইউনিট ৩, ৪ ও ৮ বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে গ্রামার এবং কমপোজিশন, ডিগ্রি অব কমপেনসেশন, গ্রাউন্ড এবং পার্টিসিপল, মডালস, লিকিং শব্দসমূহ, সামারি রাইটিং এ কমপ্লিটিং স্টোরি নতুন সিলেবাসে বাদ দেয়া হয়েছে।
তবে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেটের (জেডিসি) নতুন সিলেবাস ও মানবন্টন তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন মাদসারা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রক সিব্বির আহমেদ।
তিনি বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নতুন সিলেবাস ও নম্বর বিভাজনের বিষয়য়ে চূড়ান্ত হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেবাস তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, আগামী জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা থেকে নম্বর ও বিষয় কমাতে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন জানান, শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্ত:শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সুপারিশের আলোকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ৫০ এবং ঐচ্ছিক বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা না হয়ে তা ক্লাসে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সে ভিত্তিতে পরীক্ষার মানবন্টনে এনসিটিবিকে নির্দেশনা দেয়া হয়। তার ভিত্তিতে এ পরীক্ষার প্রশ্নের নম্বর বিভাজন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে জেএসসি-জেডিসির বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষার মানবন্টন চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলা দুটি বিষয় একত্রিত করে মোট ১০০ নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সৃজনশীল ও রচনামূলক অংশে ৭০ নম্বর এবং বহু নির্বাচনী অংশে ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের নম্বর ১০ এবং প্রতিটি বহু নির্বাচনী প্রশ্নে নম্বর হবে এক করে। ইংরেজি বিষয়কে চারটি বিভাগে ভাগ করে এ বিষয়ের মানবন্টন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, এনসিসিসির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নতুন সিলেবাস ও নম্বর বিভাজন করা হয়েছে। সেখানে নম্বর ও বিষয় কমানো হয়েছে।
সে অনুযায়ী নতুন সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। বিষয়গুলো শিক্ষকরা অবগত রয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সিলেবাস ও মানবন্টন সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। এরপর তা কার্যকর হবে।
ঐচ্ছিক ক্লাস মূল্যায়নের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ক্লাসের মাধ্যমে ঐচ্ছিক বিষয় মূল্যায়ন করলে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেক কমে যাবে। ক্লাসে তারা ইচ্ছেমত শেখার সুযোগ পাবে। স্বাধীনভাবে শেখার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ঐচ্ছিক বিষয় ক্লাসে মূল্যায়নের পর তা স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হবে। সেসব নম্বর শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপ্টে তুলে দেয়া হবে। নতুন সিলেবাসে মোট ৩৩ শতাংশ কমানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।