ছারপোকা কতটা যন্ত্রণাময় তা শুধু মাত্র ভুক্তভোগীরা জানেন। শান্তির ঘুম হারাম করার জন্য একটি ছারপোকা যথেষ্ট। মূলত বিছানা, বালিশ, সোফা এইসকল জিনিসে ছারপোকার উপদ্রব অনেক বেশি হয়ে থাকে। একবার ঘরে ছারপোকা ঢুকে পড়লে তা দূর করা বেশ কঠিন। দীর্ঘদিন যদি কেউ ছারপোকার কামড় খেতে থাকেন, তাহলে একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালের গবেষণা পত্রে এমন খবর প্রকাশ হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী ছারপোকার কামড়ে যেসব রোগ হতে পারে-
অ্যালার্জি: গবেষণায় দেখা গেছে, ছারপোকা কামড়ালে কারও কারও মারাত্মক ধরনের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়। সেক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাস কষ্টও বাড়তে শুরু করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ঠিক সময়ে যদি চিকিৎসা শুরু করা না হয়, তাহলে কষ্টটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
সংক্রমণ: খয়েরি রঙের এই ছোট্ট পোকাটির কারণে মারাত্মক ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। আসলে ছারপোকা কামড়ানোর পর ক্ষত স্থান মারাত্মক চুলকাতে শুরু করে। ফলে চুলকাতে চুলকাতে যদি একবার কেটে যায়, তাহলে সে জায়গা দিয়ে একাধিক ক্ষতিকর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়। আর এমনটা হওয়া মাত্র শরীরের অন্দরে সংক্রমণ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
শ্বাসকষ্ট: ঘরের যে জায়গায় ছারপোকারা বাসা বাঁধে, সেখানকার হাওয়া-বাতাসে এত বিষ ছড়িয়ে যায় যে তা যদি একবার শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে যায় তাহলেই বিপদ! এ ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকদের মতে, যারা অ্যাজমা রোগে ভুগছেন, তাদের আশেপাশে যদি এমন পোকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তাহলে রোগের প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।
একাকিত্ব: সবারই মনে ছারপোকাদের নিয়ে একটা ভয় রয়েছে। কেউই এমন বাড়িতে যেতে চান না যেখানে ছারপোকার রাজত্ব রয়েছে। এজন্য এসব বাড়ির বাসিন্দারা একাকিত্বে ভোগেন, যা ধীরে ধীরে তাদের শরীর এবং মনের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ইনসোমনিয়া: সারা রাত ছারপোকার কামড় খেলে ঘুম আসবে কীভাবে? তাই তো ছাড় পোকাদের থেকে দূরে থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। না হলে প্রথমে ঘুম ছুটবে। তারপর তার লেজুড় হয়ে একাধিক রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধবে। কারণ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ভাঙতে শুরু করে। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করবে।
অ্যানিমিয়া: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে ছারপোকার কামড় খেয়ে আসছেন তাদের শরীরে লহিত রক্ত কণিকার মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আসলে বেড বাগের মূল খাবারই হল রক্ত। এবার ভাবুন এক সঙ্গে লক্ষাধিক ছাড় পোকা আপনার শরীরের নানা অংশ থেকে লিটার লিটার রক্ত খেয়ে চলেছে। এমনটা হওয়ার পর শরীরে রক্ত বাঁচবে?
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ে: বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে, ছারপোকার প্রতিনিয়ত আক্রমণের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরে বেশ কিছু পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের মাত্রা বাড়ে। তাই আকারে ছোট এই পোকাটি থেকে সাবধানে থাকুন।
ছারপোকার কামড়ে ঘরোয়া প্রতিষেধক: ঘরে একবার ছারপোকা বাসা বাধঁলে সেটি দূর করা অনেক কঠিন হয়ে পরে। কাজেই সুস্থতায় এটি তাড়ানোর উপায় জানা জরুরি। ছারপোকার কামড়ের কারণে চুলকানি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় আপনার হাতের কাছেই রয়েছে। চিকিৎসাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই পোকা কামড়ালে প্রথমে ‘জীবাণুনাশক সাবান’ ও পানি দিয়ে ধুয়ে তারপর প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে হয়। তাহলে স্বাস্থ্যক্ষতি এড়ানো যায়।
কলার খোসা: কলার খোসায় ‘ক্যারোটেনয়েডস’, ‘পলিফেনলস’ ইত্যাদি জৈব-সক্রিয় ভেষজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এর খোসার ভেতরের অংশ কামড়ানো স্থানে ঘষলে জ্বালাপোড়া কিংবা চুলকানির অনভূতি প্রশমিত হয়। পদ্ধতিটি যতবার খুশি অনুসরণ করা যায়।
দারুচিনি ও মধু: প্রদাহরোধী উপাদান থাকায় দারুচিনি এবং মধু ত্বকে আর্দ্রতা যোগায়। দুটি উপাদান একত্রে মিশিয়ে ছারপোকার কামড়ের চিকিৎসায় কাজে লাগাতে পারেন। এতেও সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। দুতিন টেবিল-চামচ দারুচিনির গুঁড়ার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে মাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন তিন থেকে চারবার পেস্টটি প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাবেন।
টুথপেস্ট: টুথপেস্টে থাকা মেনথল কামড়ানো অংশে ঠাণ্ডা অনুভূতি দেয়, যা চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমায়। কামড়ানো অংশে ১০ মিনিট টুথপেস্ট মাখিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন তিন থেকে চারবার পেস্ট মাখালে উপকার পাবেন।
মাউথওয়াশ: মাউথওয়াশে ‘ইথানল’ নামে জীবানুনাশক উপাদান রয়েছে, যা সংক্রমণ দূর করতে সহায়ক। এক্ষেত্রে তুলার বল বানিয়ে তা মাউথওয়াশে ডুবিয়ে কামড়ানো অংশে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লবণ: ছারপোকার কামড় থেকে হওয়া র্যাশ ও প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে প্রাকৃতিক ব্যাক্টেরিয়ানাশক লবণ। কামড়ানোর জায়গায় লবণ ঘষলে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া থেকে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ভালো ফল পেতে দিনে তিনবার লবণ লাগাতে পারেন। সূত্র: বোল্ডস্কাই ও রয়টার্স