সিনেমা হলো মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। যে কারণে পরিচালকদের অনেক বেশি সচেতন হতে হয়। কিন্তু বাস্তবে অনেক পরিচালকই শুধুমাত্র ব্যবসার কথা ভাবেন। যে কারণে যৌনতার নামে পর্দায় দেখা যায় ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও নারীদের পীড়নের দৃশ্য।
বলিউডও একসময় এর ব্যতিক্রম ছিল না। বর্তমানে অনেক কিছু বদলে গেলেও আজ থেকে তিন-চার দশক আগে ভয়াবহ অবস্থা ছিল বলিউউড সিনেমার।
বলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতা জোয়া আখতারের মুখে শোনা গেল তার শৈশবে দেখা সিনেমার অভিজ্ঞতার কথা। যে অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। ‘গণমাধ্যম ও বিনোদন অঙ্গনে নারী চরিত্র’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘সিনেমায় সুস্থ যৌন সম্পর্ক দেখানোর বদলে অসুস্থ যৌনতাকে প্রণোদনা জুগিয়েছেন পরিচালকেরা। অনেক পরে এসে বুঝলাম, আমি নিজেই ছেলেবেলা থেকে সেসব দেখে বড় হয়েছি। ধর্ষণের দৃশ্য, নারীদের পীড়ন, অপমান করার দৃশ্য দেখিয়েছেন আমাদের পরিচালকেরা। কিন্তু সুস্থ যৌন সম্পর্কের দৃশ্য আমরা তেমন দেখতে পাইনি।’
জোয়া আখতার মনে করেন, সিনেমায় অসুস্থ যৌনতা দেখানোর ফলে ভারতের একটি প্রজন্ম সেভাবেই নিজেদের মন মানসিকতা তৈরি করেছে। যে কারণে এই মুহূর্তে যৌন নিপীড়নের ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটছে দেশটিতে।
ছোটবেলায় দেখা ওই দৃশ্যগুলো মানুষের মস্তিষ্কের ওপর কুপ্রভাব ফেলে। যার ফলে বিকৃত যৌনতাকেই সঠিক বলে মনে হয় অনেকের কাছে। আলোচনায় নিজেকে ‘কড়া নারীবাদী’ হিসেবে উল্লেখ নারী হয়ে ওঠার পেছনে পুরুষের অবদানের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য পুরুষের ভূমিকাও জরুরি
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছোটবেলায় দেখা সিনেমায় কখনো চুমু খেতে দেখেনি, কোমল প্রেম দেখেনি। মানুষকে সুস্থ যৌনমিলন করতে বা ভদ্র আচরণ করতে দেখেনি। যৌনতাকে পর্দায় উপস্থাপনকে সমস্যা মনে করা ভুল। আপনারা কী দেখিয়েছেন! নারীরা বলবে ‘না’, অমনি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শৈশবে এসব দৃশ্য কেন দেখতে হবে। শিশুরা যখন বেড়ে উঠবে, তখন তাকে খারাপ জিনিসগুলো পরিবর্তন করা শেখাতে হবে। বলিউডের সিনেমায় এখন থেকে বেশি বেশি নারীদের গল্প রাখা উচিত। সেখানে নারী সম্পৃক্ত নানা ঘটনা জুড়ে দেওয়া দরকার।’