ডাকসু নির্বাচন : আলোচনায় শোভনের পরাজয়

বিশেষ প্রতিনিধি

নুর-শোভন
ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হককে বরণ করে নিচ্ছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১২ মার্চ। ছবি সংগৃহিত

ডাকসু নির্বাচনে সবাই নিশ্চিত ছিল কেন্দ্রী সংসদে ছাত্রলীগের পূর্ণ প্যানেল জয় লাভ করবে। প্রায় সব পদেই ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হলেও ভিপি পদে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরের কাছে হেরে গেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ডাকসুতে ২৫টি পদের মধ্যে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া বাকি ২৩ পদেই ছাত্রলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ আবাসিক হলেও ছাত্রলীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। কোনো কোনো হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়েই জিতেছে। ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের এ বিশাল বিজয়ের মধ্যেও সংগঠনটির শীর্ষনেতা শোভন কেন হারলেন, সেটিই এখন আলোচনার বিষয়।

নির্বাচনের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল ছাত্রলীগ একটি পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করছে। ঢাবি ছাত্র হলগুলোর ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব ফলে ছাত্রলীগের যে নিজস্ব ভোট ব্যাংক ছিল সেই ভোটগুলো ছাত্রলীগ পেয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে শোভনকে হারালো কে? ছাত্রলীগেরই একটি অংশ শোভনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে? ডাকসুর জিএস পদে গোলাম রাব্বানী ১০৪২৪ ও এজিএস পদে সাদ্দাম হোসেন ১৫৩০১ ভোট পেয়ে বড় ব্যবধানে জয় লাভ করেছেন। সেখানে শোভন মাত্র ৯ হাজারের কিছু বেশি ভোট কেন পেল তার মানে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী ডাকসুর অন্যান্য পদে ও হল প্যানেলে ভোট দিলেও ভিপি পদে ভোট দেয়নি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, ছাত্রলীগের একটি অংশ শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। নির্বাচনের আগে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের এই অংশ যৌথভাবে প্যানেল দেয়ার আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল। এ কারণেই ছাত্রলীগের ওই অংশ শোভনকে ভোট দেয়নি।

ডাকসুতে শোভনের পরাজয়ের বিষয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা বলেন, এটা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ছাত্রলীগের সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কারণেই হয়েছে। এবারের কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগে আধিপত্য বিস্তার করে আসা সংগঠনের সাবেক শীর্ষনেতাদের সিন্ডিকেট তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। উত্তরবঙ্গের ছেলে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে এসে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছে। যে কারণে শোভনকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেননি ছাত্রলীগের সাবেক ওই শীর্ষনেতারা। এবারের ডাকসু নির্বাচনে তাদের অনুসারীদের দিয়ে শোভনকে হারানোর হয়েছে।

এদিকে পরাজিত ছাত্রলীগের সভাপতি রেজোয়ানুল হক শোভনকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জয়দেব নন্দী। তিনি লিখেছেন- শোভন বিজয়ী হতে পারেনি; কেন বিজয়ী হতে পারেনি, সে বিতর্কে যাবো না। শোভন ভিপি না হয়ে অন্য কেউ ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে শোভনের নির্বাচিত না হওয়াটা আমাকে যন্ত্রণা দিয়েছে, ব্যথিত করেছে, কষ্ট দিয়েছে। ধারণা করি সাবেক-বর্তমান অনেকেরই সেটা হয়েছে। সবাইকে ছুঁয়ে গেছে। শোভন ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেনি; তার যে অন্তর্দহন/অন্তর্ক্রন্দন, সেটা অনেকেই ধারণ করতে পারেনি, যেটি বর্তমানদের ধারণ করা উচিত ছিল। আপনারা সেটি ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই তার চরম কষ্টের সময়ে পাশে থাকেননি।

শোভন ভিপি হতে পারেনি (যে কারণেই হোক) বলে ছাত্রলীগের অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ ছিল। তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে শোভন একা কেন ছুটে আসবে? তাদেরকে হলে ফিরিয়ে নিতে কি নবনির্বাচিতদের আসা উচিত ছিল না? ব্যক্তি শোভন ভিপি পদে লড়েছে, কিন্তু ভিপি পদটি কি শুধুই ব্যক্তির? শোভনের (আপাত) পরাজয় কি ব্যক্তি শোভনের? নাকি সংগঠনের? সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে বলছি, বিক্ষুব্ধ কর্মীদেরকে নিবৃত করতে আমরা শুধু ব্যক্তি শোভনকেই দেখেছি। ব্যক্তি শোভন নিজ কর্মগুণে সবার অন্তরকে জয় করেছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, গোটা ছাত্রলীগ আমাদের মন জয় করুক। কিন্তু সেটি হয়নি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে