বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে আমরা দেখছি, যারা সরকারের অপছন্দের মানুষ, তাদের গ্রেপ্তার ও হত্যা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের গুম করা হচ্ছে।’
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে মুক্ত করা ও মামলা প্রত্যাহার করার সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বলেছি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা অযৌক্তিক। এর মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। আবারও বলছি, এসব কিছু উপেক্ষা করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলে বিএনপি সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন নয়; বিবিসি, আল জাজিরা, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের বড় বড় পত্রিকাগুলো বলেছে যে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। ভারতের বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায় বিষয়টি লেখা হয়েছে।
বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোকে সরকার চরমভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে তারা অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারছে না। এত প্রতিকূলতার পরও তারা অনেকেই অনেক কিছু প্রকাশ করছে। এ জন্য তাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। মার্কিন মানবাধিকার বিভাগ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা কোনো সন্দেহ নেই।’
বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভুলতে পারি না, ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনী আক্রমণের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার ও স্বাধিকার নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ ২৬ মার্চের ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে সেই স্বাধীনতা দিবস যখন উদ্যাপন করতে চলেছি, তখন মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘যার স্বামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তাঁকে আজ অন্ধকার কারাগারে কারাভোগ করতে হচ্ছে। আজ যখন স্বাধীনতা দিবস পালন করতে যাব, তখন হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। লক্ষাধিক গায়েবি মামলায় ২৬ লাখ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা দিবসটি পালন করছি।’
স্বাধীনতা
দিবস
উপলক্ষে
বিএনপি
৭
দিনব্যাপী
কর্মসূচি
ঘোষণা
করেছে।
আজ দলের যুগ্ম সম্পাদক,
সাংগঠনিক সম্পাদক এবং অঙ্গ ও
সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের
যৌথসভা শেষে এ কর্মসূচি
ঘোষণা করে বিএনপির মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ২৫ মার্চ বিএনপির উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অথবা মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ২৬ মার্চ সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ওই দিন স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা ও ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ, ২৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বিএনপির উদ্যোগে র্যালি। এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো এবং সারা দেশে বিএনপি তাদের সুবিধা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং দলের পক্ষ থেকে পোস্টার ছাপানো হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।