আমদানি-রপ্তানিতে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশংকা

বিশেষ প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাক ও ভারী গাড়ি চলাচলে এমনিতে রাত-দিন যানজট থাকে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার সড়ক পথগুলো। লালখানবাজার থেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হলে পরিস্থিতি কি হবে তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর আমদানি-রপ্তানিকারকদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই এই ভেবে যে তাদের আমদানি পণ্য, শিল্প-কারখানার কাঁচামাল সময় মত পাবে কি না এবং রপ্তানি পণ্য যথাসময়ে শিপমেন্ট সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে। এসব প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দু’দফায় চিঠি দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( সিডিএ )’র কাছে জানতে চেয়েছে কর্মপরিকল্পনা এবং বন্দর এলাকায় প্রকল্পের ড্রয়িং, ডিজাইন সম্পর্কে। ৬ মাসেও তাদেরকে কিছু জানায়নি সিডিএ।


বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক এ ব্যাপারে জানিয়েছেন যে নির্মাণ কাজ চলাকালে জেটি থেকে পণ্য ডেলিভারি এবং রপ্তানি পণ্যের গাড়ি জেটিতে প্রবেশে মারাত্মক সংকট তৈরির আশংকা করা হচ্ছে। এটা যাতে না হয় তার জন্য কি বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ পরবর্তীতে যাতে পণ্যবোঝাই ভারি গাড়ি যাতায়াত ব্যাহত না হয় সেভাবে ড্রয়িং ডিজাইন হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছে সিডিএ’র কাছে পত্রে। দ্বিতীয় দফায় পত্র দেয়ার পর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে ৬ মাস। তারা নিরুত্তর। বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে নির্মাণ কাজ করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওমর ফারুক।

universel cardiac hospital


প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং লং ভেহিক্যাল যাতায়াত করে জেটিতে। বন্দরমুখী সব রাস্তায় এগুলোর কারণে অহরহ জট লেগে থাকে। তা সামলাতে হিমশিম খেতে যানবাহন পুলিশকে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের সময় পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশংকা সংশ্লিষ্ট সবার। বহদ্দারহাট এবং আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের সময় ভয়াবহ দুর্ভোগ হয়েছিল। সেখানকার তুলনায় বন্দর এলাকার সড়ক পথে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বহুগুণ। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকালে দুর্গতি অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমদানি-রপ্তানি মাল পরিবহন এবং বিমান যাত্রীদের যাতায়াতে বড় রকমের বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে।


মহানগর পুলিশের বন্দর জোনের উপ-কমিশনার ( ট্রাফিক ) ফাতিহা ইয়াছমিন জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকালীন সময়ে যানবাহন চলাচলের বিষয়টি নিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক হয়েছে একবার। কাজ শুরুর আগে নিমতলা -এক্সেস রোড হয়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার করা হলে বন্দর থেকে বের হওয়া যানবাহন চলাচলে তেমন সমস্যা হবেনা বলে জানানো হয়। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। এতে অনেক সময় দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। নিমতলা থেকে ফৌজদারহাট সড়ক সংস্কার এখনো হয়নি। যার কারণে চালকরা সড়কটি ব্যবহার করেনা। প্রতিদিন লং ভ্যাহিকেল বন্দরে আসা যাওয়া করে ৭০০ থেকে ৮০০। স্বাভাবিক সময়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে কষ্টকর হয়ে যায়। আমরা আশা করছি পুরোদমে নির্মাণ কাজ শুরুর আগে নিমতলা সড়ক সংস্কার করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হবে। সড়কটি সংস্কার না করে এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু করা হলে দুই লাইনের পরিবর্তে এক লাইনে যানবাহন চলাচল করতে হবে। এতে স্বাভাবিকভাবে ধীরগতি হবে।


দেশের প্রধান বাণিজ্য নগরী এবং বন্দর শহর চট্টগ্রাম। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। প্রতি বছর প্রায় এক লাখ জনসংখ্যা নতুন করে যোগ হচ্ছে এই নগরীতে। চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল এবং বান্দরবান ও কক্সবাজারের বিপুল সংখ্যক যাত্রী প্রতিদিন যাওয়া আসা করে শাহ আমানত সেতু হয়ে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটে নাকাল হতে হয় মানুষকে। বিমান যাত্রীরা ফ্লাইট মিস করার আশংকায় থাকেন। যানজটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ দিনদিন কমছে চট্টগ্রামে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিমানবন্দর থেকে নগরীতে আসতে যানজটে আটকা পড়েন। যানজটের যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ পেতে নেয়া হয়েছে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয় ২০১৭ সালের অক্টোবরে। আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে ম্যাক্স র‌্যানকিন জেভিকে। ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে কয়েকটি অংশে ভাগ করে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে