গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য রোধে মাঠে নামছে বিশেষ মনিটরিং সেল

বিশেষ প্রতিনিধি

গণপরিবহনে চলছে ভাড়া নৈরাজ্য
প্রতীকী ছবি

গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য রোধ ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতে এবার মাঠে নামছে বিশেষ মনিটরিং সেল। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এ সেল প্রথম অবস্থায় রাজধানীতে তদারকি করবে।

পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে মনিটরিং জোরদার করা হবে। তবে আগামী ঈদুল ফিতরকে ঘিরে সারা দেশে থাকবে অধিদফতরের বাড়তি নজরদারি। আর তদারকির সময় অনিয়ম পেলেই পরিবহন মালিক, চালক ও হেলপারকে ভোক্তা আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হবে।

universel cardiac hospital

এসব বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ সেল মাঠে নামবে। সপ্তাহের ৫ দিন সেলের সদস্যরা রাজধানীর প্রত্যেকটি পয়েন্টে গিয়ে তদারকি করবেন। তারা অধিদফতরের পরিচয় না দিয়ে যাত্রী হিসেবে গণপরিবহনে ভ্রমণ করবেন।

এ সময় ভাড়া ও যাত্রীসেবা নিয়ে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের নৈরাজ্য করলেই মালিক থেকে শুরু করে চালক ও পরিবহনের হেলপারের বিরুদ্ধে ভোক্তা আইনে মামলা করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, অধিদফতর সব সময় ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। বর্তমানে পরিবহন সেক্টর ত্রাসে পরিণত হয়েছে। যার কাছে যেভাবে পারছে ভাড়া আদায় করছে। কিন্তু দেয়া হচ্ছে না নির্ধারিত যাত্রীসেবা।

সরকারের দেয়া ভাড়ার মূল্য তালিকাও মানা হচ্ছে না। অনেক সময় তারা যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করছে। সব মিলিয়ে একজন ভোক্তা পরিবহন খাতে সেবা নিতে গিয়ে অনেকভাবে প্রতারিত হয়ে থাকেন। আমরা এই প্রতারণা রোধ করতে চাই।

শাহরিয়ার জানান, আগামী ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশের বাস ও রেলস্টেশন এবং নদীবন্দরে থাকবে ভোক্তা অধিদফতরের বাড়তি নজরদারি।

অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পরিবহনে যাত্রীর সেবা নিশ্চিত ও অসাধুদের শাস্তি দিতে একটি রোডম্যাপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- চালকরা অসুস্থ প্রতিযোগিতা করলে, পরিবহনে অতিরিক্ত বা দাঁড়িয়ে যাত্রী নিলে, নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠানো বা নামানোর মাধ্যমে যাত্রী হয়রানি করলে, নারী যাত্রীদের আসন সেবা সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত না করলে, সিটিং সার্ভিসের নামে বেশি ভাড়া নিলে, সিটিং সার্ভিসে একজন যাত্রী নির্ধারিত স্থানে নেমে গেলে তার সিট নতুন করে অন্য যাত্রীর কাছে বিক্রি করলে ভোক্তা আইনে শাস্তি দেয়া হবে।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এ পরিকল্পনা অনেক প্রশংসনীয়। আর এই তদারকি যদি জোরদার ও সুষ্ঠুভাবে করা যায়, তাহলে জনসাধারণের জীবনে অনেক স্বস্তি আসবে।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ইচ্ছেমতো বাড়ানো হয়েছে যাত্রী পরিবহন ভাড়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ-তিন গুণ করা হয়েছে। সিটিং সার্ভিস, গেটলক, সময় নিয়ন্ত্রণ, স্পেশাল সার্ভিসসহ নানা নামে যাত্রীদের ধোঁকা দেয়া হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বিআরটি-এর ভাড়ার তালিকা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৭০ পয়সা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা বেঁধে দিলেও তা মানছে না পরিবহনগুলো। সিটিং ও গেটলক সার্ভিসের নামে তারা সর্বনিম্ন ভাড়া আদায় করছে ১০-২৫ টাকা।

জানা গেছে, মহাখালী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৮ টাকা। এই রুটে বিভিন্ন পরিবহন ভাড়া আদায় করছে ২০ টাকা। রাজধানীর নর্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার না হলেও এর জন্য যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে ২৫ টাকা। মিরপুরের কালশী সড়কের মাটিকাটা অংশে ইসিবি চত্বর থেকে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার।

অথচ গণপরিবহনগুলো এর ভাড়া আদায় করছে ২৫ টাকা। সিটিং সার্ভিসের নামে এভাবেই যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া দেয়ার পরও একজন যাত্রী তার নির্ধারিত সেবা পাচ্ছেন না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে