বিএনপির সিদ্ধান্ত বাড়লেও বাস্তবায়ন শূন্য

বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপি
বিএনপি। ফাইল ছবি

বিএনপি গত তিন বছরে দলের স্বার্থে অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছিল কখনো দলীয় প্রধানের একক, সিনিয়র নেতাদের যৌথ সভা কিংবা সারা দেশের নেতাদের সমন্বয়ে কাউন্সিল করে। হাতেগোনা কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়নের ঝুড়িতে শূন্য বিরাজ করছে।

এ ব্যর্থতার জন্য খোদ দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাদের দায়ী করা হচ্ছে। একের ব্যর্থতার দায় অন্যের কাঁধে চাপানোর প্রবণতাও বেড়ে গেছে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনাকারী দলটিতে।

universel cardiac hospital

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিতে এখন ভাটা চলছে। আর ভাটার টানে পড়লে রাজনৈতিক দল ও দলীয় নেতাদের চিত্র এমনটিই হয়। তবে ক্ষমতার বাতাস বা সুবিধা রেখা দেখা দিলে তা কেটে যায়।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে দূরে ছিল; কিন্তু এমন করুণ চিত্র দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী। বিএনপির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তিনি দক্ষ কাণ্ডারির অভাব বোধ করেন। একই সঙ্গে বলেন, চাপানো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন। সিদ্ধান্ত নিতে হবে সময়োপযোগী। তবেই বাস্তবায়ন সম্ভব।

তবে দলের ভাটার কথা মানতে নারাজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গায়েবি মামলা, শীর্ষ নেতার বন্দিদশার পরও বিএনপি অটুট ও ভালো আছে।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করে সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলেও সব পদ পূরণ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। এই সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে তো পারেইনি বরং শীর্ষ নেত্রীর সাজা নিয়ে কারাগারে যাওয়ায় এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অভাবিত ফলে আরো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে বিএনপি।

কাউন্সিলের মেয়াদ পূর্ণ করলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি। কাউন্সিলে দলকে শক্তিশালী করতে এক নেতার এক পদের বিধান রেখে খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৬টি উপ-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

দলের সদস্য ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা, মাসিক চাঁদা ৬ মাস না দিলে পদ স্থগিত, এক বছর না দিলে পদ বাতিল, টানা দুই বছর চাঁদা না দিলে তার প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত, তিন বছর না দিলে প্রাথমিক সদস্য পদ বাতিল করাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় কাউন্সিলে। এছাড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে তৃণমূল বিএনপিকে শক্তিশালী করতে নেওয়া হয় নানামুখী পদক্ষেপ। অঙ্গ দলগুলোকে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

কাউন্সিলের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্সিলের পরে ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের ৭৩ জন সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। শুরুতে স্থায়ী কমিটির দুটি পদ খালি থাকলেও পরে তিন সদস্যের মৃত্যুতে নীতিনির্ধারণী ফোরামের ৫টি পদ শূন্য হয়। ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও যুববিষয়ক সম্পাদক পূর্ণ মেয়াদে ঠিক করতে পারেনি।

নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও এক নেতার এক পদের বিধান কার্যকর করতে পারেনি বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৬১ নেতা একাধিক পদ ধরে রেখেছিলেন। ‘এক নেতার এক পদ’ বিধানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৩০ জন নেতা একাধিক পদ ছেড়ে দেন। কিন্তু বাকি পদের অনেকেই এই বিধানের প্রতি সম্মান দেখাননি।

কাউন্সিলে বিষয়ভিত্তিক অর্থ ও পরিকল্পনা, জনস্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, গবেষণা, শিল্প ও বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, নারী ও শিশু, যুব উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ, যোগাযোগ ও গণপরিবহন, এনার্জি ও খনিজসম্পদ, মানবাধিকার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মুক্তিযুদ্ধ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণ, সুশাসন ও জনপ্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জাতীয় সংহতি ও এথনিক মাইনরিটি নামে ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল। এক একটি কমিটিতে ১২ সদস্য রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই কমিটি গঠন হয়নি।

জানা গেছে, গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে দেশের সাংগঠনিক সব জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ হয়েছে। কিন্তু শতভাগ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও এক নেতা একাধিক পদে থাকার আগ্রহের কারণে কমিটি গঠনে নানা সমস্যাও হয়েছে।

এছাড়া গত ৩ বছরে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আংশিক কমিটি দিয়েই চলছে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে সুপার ফাইভ বা সুপার সেভেনের নেতারা তেমন কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছেন না। ফলে বেঁধে দেওয়া সময় পার হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে পালন করায় কাউন্সিলের পর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে সময় জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে আবার বিএনপি ‘ফিনিক্স পাখি’র মতোই ঘুরে দাঁড়াবে বলে ঘোষণা দেন মহাসচিব।

কাউন্সিলের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর গত ১৯ মার্চ তিন বছরে বিএনপির কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কাউন্সিল হওয়ার পর দল সংগঠিত হয়েছে। যেসব কর্মসূচি ছিল পালন করেছে। নির্বাচনের মতো একটা বিশাল কর্মকাণ্ডে দল অংশ নিয়েছে। প্রতিকূলতা ভয়াবহ ছিল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে