কলেজ কর্তৃপক্ষ একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে চলতি বছর থেকেই ভর্তি ফি, সেশন চার্জ, উন্নয়ন ফিসহ কোনো ধরনের ইচ্ছামতো ফি আর আদায় করতে পরবে না।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভর্তি শুরুর আগেই সব ব্যয়ের হিসাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নোর্টিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে ঝুলিয়ে দিতে এবার নির্দেশনা দেবে । এছাড়াও চলতি বছর একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালায় বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, আগামী ১২ মে থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু হতে পারে। তিনটি ধাপে চলবে আবেদন কার্যক্রম। এবারও অনলাইন ও মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া চলবে। ৩০ জুন পর্যন্ত তৃতীয় ধাপের আবেদন ও ফল প্রকাশ কার্যক্রম শেষ করতে প্রস্তাব করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। ইতোমধ্যে ‘একাদশ ভর্তি নীতিমালা-২০১৯’ এর খসড়া নিয়ে গত রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা হয়েছে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ভর্তি নীতিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- ভর্তি শুরুর আগেই সব কলেজে ভর্তি, বেতন, সেশনচার্জ, উন্নয়ন ফিসহ সব ব্যয় নোর্টিশ বোর্ড ও প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ঝুলিয়ে দেয়া, প্রতিবন্ধী হিসেবে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা নির্ধারণ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি বয়সসীমা ২০ হলেও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ২২ বছর করার প্রস্তাব করাসহ যে কোনো বিষয় থেকে গার্হস্থ্য ও সঙ্গীত বিষয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও নতুন বছর নিশ্চয়ন (রেজিস্ট্রেশন) ফি বাবদ ১৮৫ টাকার বদলে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১৯৫ টাকা, বিলম্ব ফি ৫০ টাকার বদলে ১০০ টাকা, পাঠ বিরতি বা ইয়ার লস শিক্ষার্থীদের ১০০ টাকার বদলে ১৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুয়া ভর্তি ও নিশ্চয়ন বন্ধে একটি মোবাইল একটি আবেদন ও আবেদনে অভিভাবক হিসেবে বাবা অথবা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যুক্ত করার সুপারিশ করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল বলেন, ১৫ বছর আগে একাদশ শ্রেণির ভর্তিসহ সকল ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সব ধরনের খরচ বাড়ায় এবার ভর্তির কিছু খাতে ফি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এটি সামান্য পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। এতে কারো উপর চাপ সৃষ্টি হবে না বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, একদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন আগামী ১২ মে থেকে শুরু করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৩০ জুন পর্যন্ত তিন ধাপের আবেদন ও ফল প্রকাশ কার্যক্রম চলবে। পহেলা জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, একাদশ শ্রেণির ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করতে আমরা একমাস আগে থেকেই খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছি। গত রোববার (২৪ মার্চ) শিক্ষামন্ত্রীর সভাপত্বিতে খসড়া নীতিমালা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়েছে। শিগগিরই আরেকটি সভা করে দ্রুতই এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে।
খসড়া নীতিমালায় গত বছরের মতই অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা মাদরাসায় আবেদন করা যাবে। এরজন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। মোবাইল ফোনে প্রতি এসএমএসে একটি করে কলেজে আবেদন করা যাবে। এরজন্য ১২০ টাকা দিতে হবে।
তবে এসএমএস এবং অনলাইন মিলিয়ে কোনো শিক্ষার্থী ১০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে না। এবারও ভর্তি কার্যক্রমে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণিতে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য সব মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকা ধার্য করা হয়েছে।
তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না। মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আংশিক এমপিওভুক্ত বা এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা হিসেবে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফিসহ বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা এবং ইংরেজি ভার্সনে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এবার একাদশে ভর্তি শতভাগ মেধার ভিত্তিতে করা হবে। তবে বিশেষ কোটায় (মুক্তিযোদ্ধা-রাজধানীতে ৫ শতাংশ, বিভাগীয় ও জেলা সদরে ৩ শতাংশ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধঃস্তন সব দফতরে ২ শতাংশ, বিকেএসপিতে ০.৫ এবং প্রবাসী ০.৫ শতাংশ) ভর্তি করা হবে। যদি এসব কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়া যায় তবে এ আসনে অন্য কাউকে ভর্তি করা যাবে না।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সব পাবলিক কলেজ সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফি সংগ্রহ করবে। দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি কলেজ/ সমমানের প্রতিষ্ঠানে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। এ নীতিমালার কোনো ব্যত্যয় হলে সেই বেসরকরি কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে। সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।