দেশভাগের (১৯৪৭ সালে) পর ভারতের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে বাঙালিরাই এগিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা বাঙালিরাই করেছে। পাকিস্তানের উঁচু-লম্বা সৈন্যরা কিন্তু এগিয়ে যায়নি, বাঙালি রেজিমেন্টই এগিয়ে গিয়েছিল। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে বাঙালি ছাড়া রক্ষা হতো না। এরপর ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা ছয় দফা দিলেন।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় বুধবার এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাকিস্তানিদের দ্বারা বাঙালিদের শোষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের অর্থ দিয়ে তারা মরুভূমিতে ফুল ফুটিয়েছিল, আর আমাদের মরুভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধেই ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের পাট-চা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অর্থকরী ফসল বিদেশে রফতানি করে সব অর্থ নিয়ে যেতো পাকিস্তানিরা। তাদের ওখানে তিনবার রাজধানী পরিবর্তন হয়। যতবার রাজধানী পরিবর্তন হয়েছে, ততবার অনেক টাকার প্রয়োজন হয়েছে। সব টাকা দিতে হয়েছে আমাদের। আর উন্নতি হয়েছে ওখানে।
বাঙালিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে এগিয়ে ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের চিন্তা-চেতনা, খাদ্যাভ্যাস কোনও কিছুতেই পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের কোনও মিল ছিল না। শিক্ষা-দীক্ষা-সংস্কৃতি সবদিক থেকে আমরা উন্নত ছিলাম। সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর সংখ্যালঘিষ্ঠের বৈষম্য-শোষণ-নির্যাতনের সময় ছিল সেটি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দুই মাস পর পর আমাদের ঋতু বদলায়, সবই বদলায়। যার ফলে আমরা খুব বিস্মৃতিপরায়ণ। না হলে যে পাকিস্তানিরা বাঙালিকে অত্যাচার করেছে, স্বাধীনতার সময় কীভাবে একটা অংশ সেই পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করলো।
স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মিত্রবাহিনীকেও দেশে ফেরত পাঠান। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন স্বাধীনচেতা নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন নেতা ছিলেন বলে। বিশ্বের কোনও দেশে মিত্রবাহিনী যুদ্ধের পর ফেরত যায়নি, শুধু বাংলাদেশেই এটা সম্ভব হয়েছে।