এফআর টাওয়ারে আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫

বিশেষ প্রতিনিধি

আগুন
বনানীতে আগুনে নিহত অন্তত ২৫

রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ অন্তত২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে এতে ৭০ জন আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

নিহতরা হলেন, শ্রীলঙ্কান নাগরিক নিরস (কুর্মিটোলা হাসপাতাল), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বালুগ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭) বনানী ক্লিনিক, দিনাজপুর জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে মামুন (ইউনাইটেড হাসপাতাল, আমিনা ইয়াসমিন (৪০) (এ্যাপোলো হাসপাতাল), আবদুল্লাহ ফারুক (ঢাকা মেডিকেল), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)। পরবর্তীতে ওই ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া বাকিদের নাম জানা যায়নি

universel cardiac hospital

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বনানীর ১৭ নম্বর রোডের ওই ভবনটির ৯ তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।

এছাড়াও ল্যাডার ইউনিট (বহুতল ভবন থেকে উদ্ধারকারী সিঁড়ি) ও মোটরসাইকেল ইউনিটও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী কর্মীরা ভেতরে অবস্থান করছেন।

ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন এখনও পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান।

আগুন লাগার ঘটনায় স্থানীয় এমপি আকবর হোসেন পাঠান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেছেন।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ফায়ার সার্ভিস ভবনের ভেতরে প্রত্যেক ফ্লোর সার্চ করবে। এটা সার্চ করতে সারা রাত লেগে যাবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এটা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনা মনিটরিং করছেন। আমরা খেয়াল রাখছি যাতে ভবনের ভেতর থেকে কোনো মালামাল চুরি না হয়। সে দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। এ এলাকার সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি।

ডিএমপি কমিশনার এ ঘটনাকে হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে বলেন, এ ঘটনা মর্মান্তিক, আমরা মর্মাহত। অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসেছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এসেছে। আমরা ফায়ার ব্রিগেডকে সহযোগিতা করেছি। যাতে তাদের গাড়ি সহজে ঢুকতে পারে। জনতার জটলা ভেঙে গাড়ি ঢুকতে সহযোগিতা করেছে পুলিশ।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ঘটনার পর থেকে আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আমার সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য রয়েছেন। সাংবাদিক বা নিহতদের নিকট আত্মীয়দের জন্য তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের হাতে সাতজনের মৃত্যুর সংবাদ রয়েছে। আহত হয়েছেন ৭৩ জন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে আহতরা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পায়।

সাধারণ জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঘটনার পর জনগণ এগিয়ে এসেছে। সাধারণ জনগণ আমাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা সারা রাত এখানে থাকব।

দেশবাসীর উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা দোয়া করুন। দেশবাসী দোয়া করুন। আমরা যাতে দ্রুত উদ্ধারকাজ শেষ করতে পারি।

উৎসুক জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের অনুরোধ করছি আপনারা রাস্তা ফাঁকা করে দেবেন। জনজট সৃষ্টি করবেন না।

এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দে্শ্য করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আপনারা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবেন। এমনভাবে কাজ করবেন যাতে ফায়ার সার্ভিসের চলাচলের কোনো অসুবিধা না হয়। কন্ট্রোলরুমে সব তথ্য থাকবে, সেখান থেকে তথ্য নিতে পারবেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘটনার তদন্ত নিয়ে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে তদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও তদন্ত করা হবে। এখন ইমপোরটেন্ট হলো জীবন বাঁচানো, বিল্ডিং পরিষ্কার করা, ভবনের খেয়াল রাখা- যাতে লুটপাট না হয়।

টাইম টু টাইম প্রধানমন্ত্রী মনিটরিং করছেন বলেও ডিএমপি কমিশনার জানান।

এ সময় তিনি গুজব থেকে সাবধান থাকার কথা বলেন। এতে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

জানা গেছে, ভবনটিতে দ্যা ওয়েভ গ্রুপ, হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, আমরা টেকনোলজিস লিমিটেড ছাড়াও অর্ধশতাধিক অফিস রয়েছে

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে