হেফাজতে ইসলামের কাছে সরকারের নতজানু আচরণ দুঃখজনক। পাঠ্যপুস্তকে তারা যেমন চাইছে সরকার তেমন পরিবর্তন আনছে। বিভিন্ন স্তরে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, সামাজিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল লোহানী।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা: ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে আজ শনিবার কামাল লোহানী এ মন্তব্য করেন।
সাংস্কৃতিক এই ব্যক্তিত্ব আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ভেতরে জামায়াত ঢুকে পড়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট রাষ্ট্র তৈরি করেছে। সংকট নিরসনে জনগণকে ভূমিকা রাখতে হবে।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি ফজলে হোসেন বাদশা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অথচ এখানে সব আইন প্রয়োগ ধর্মনিরপেক্ষ নয়। দণ্ডবিধির ২৯৫ থেকে ২৯৮ ধারায় যে ধর্মের অবমাননাকারী সাজার কথা বলা আছে, তা মূলত ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের সুবিধা ও সন্তুষ্টির জন্য রাখা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ধর্মের ব্যাপারে এই আইন ব্যবহারের দৃষ্টান্ত কম, একই দৃষ্টান্ত রয়েছে ব্লগারদের ক্ষেত্রে।
বাদশা আরও বলেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাম্প্রদায়িক উস্কানির স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে উদাসীন এবং তাদের দায়িত্ব প্রশ্নসাপেক্ষ। এমনকি রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানে ধর্মের ব্যবহারের ক্রমাগত বৃদ্ধি উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের চিন্তা পরিবর্তিত হয়নি। তারা আবার স্বরূপে ফিরে আসতে চাইছে। দুঃখের বিষয় তাদের সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তাদের জায়গা দখল করেছে হেফাজত। শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে তার প্রভাব বিস্তার করছে। ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে সরকারকে এ দিকে নজর দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, সারাবিশ্ব যখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার দিকে ঝুঁকছে, আমরা তখন আরও সাম্প্রদায়িক হচ্ছি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলই ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টি (জেপি)-র সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, গণআজাদী লীগ নেতা আতাউল্লাহ খান, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি মওলানা জিয়াউল হাসান, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান সোসাইটির সভাপতি নির্মল রোজারিও, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর এর ট্রাষ্টি মফিদুল হক, ন্যাপ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য এনামুল হক, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল) এর এম এম বদরুল আলম প্রমুখ।