”পুরো ভবনে রয়েছে তাসভিরের একক বলয়”

ডেস্ক রিপোর্ট

তাসভির
ফাইল ছবি

এফআর টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা কমিটির সভাপতি তাসভিরুল ইসলাম, পুরো ভবন ঘিরে তার একক বলয় রয়েছে এবং তার ইচ্ছাতেই ১৮ তলার উপরে ভবনটির বাড়তি অংশ বাড়ানো হয়। এছাড়া বাড়তি ৫ তলার মালিকানাও তাসভিরুলের বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

রোরবার দুপুরের পর গ্রেপ্তারকৃত তাসভির ও ফারুকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

universel cardiac hospital

তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ভবনের ৪৫ ভাগ মালিকানা ফারুকের আর বর্ধিত অংশের মালিকানা তাসভিরের। সে হিসাবে প্রায় ৭০ ভাগ মালিকানাই তাদের দুইজনের।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, রূপায়ণ গ্রুপ শুধু ডেভলপার কোম্পানি হিসেবে ভবন তৈরি করেই দায়িত্ব শেষ করেনি। তারা অন্য যাদের কাছে ফ্ল্যাট বিক্রয় করেছে ১২ বছরে তাদের নামে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। সে অনুযায়ী ভবনটির একটি অংশের মালিক এখনো রূপায়ণ গ্রুপ। এফআর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ২৩ তলার একটি নকশা রাজউকে জমা দিয়ে আসে। তার প্রেক্ষিতে অনুমোদন না পেয়েও ২৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়, যার কোন ভিত্তি নেই।

১৮ তলার অনুমোদনের পর ২৩ তলা ভবন নির্মাণে রাজউকের গাফিলতি ছিল কিনা, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ আনা হলো না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বনানীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ২৬ জনকে কেউ পরিকল্পনা করে খুন করেনি। এ ক্ষেত্রে ভবনটিতে আগুনের ঘটনা ঘটলে যা যা ব্যবস্থা থাকা দরকার তা রাখা হয়নি। দায়িত্বে অবহেলা জনিত অভিযোগ এনে রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, তাসভির ও ফারুককে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরপর যদি তাদের এই দায়িত্বহীনতার সঙ্গে সরাসরি কেউ জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শনিবার রাতে মামলার অন্যতম দুই আসামীকে এফআর টাওয়ারের অবৈধ অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভিরুল ইসলাম এবং ভবনটির জমির মালিক এস এম এইচ ফারুককে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এর আগে রোববার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর প্রকৃত অর্থে কে এমন ঘটনা ঘটলো, কারা দায়ী বা কাদের গাফিলতি ছিলো এগুলোর বিশ্লেষণ কখনো হয় না। এসব বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কী কী ব্যবস্থা ও উপকরণ থাকা উচিত এ প্র্যাকটিস অনেক ক্ষেত্রেই নেই। রাজউক, মালিকপক্ষ এবং ডেভেলপার কোম্পানিদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিলো দেখা হবে। সকল অপরাধ পর্যালোচনা করে তদন্ত শেষে তাদের গাফিলতি ও অপরাধ চিহ্নিত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

‘ভবন নির্মাণের আগে ও পরে কার কী ভূমিকা ছিলো সেসব আমরা তুলে ধরব। প্রত্যেকটা বিষয় বিশ্লেষণ করা হবে যেন কেউ পার পেয়ে না যেতে পারে’-যোগ করেন তিনি।

আব্দুল বাতেন বলেন, একটি ভবন নির্মাণে কী কী নীতিমালা রয়েছে সেগুলো রাজউকের পক্ষ থেকে নজরদারি করে। যে এই ইন্সপেকশন করে তার দায়-দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি যে নিয়ম মেনে সেটি করা হয়েছিল কিনা। এছাড়া, ফায়ার সেফটির বিষয়গুলোতে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এ ভবনে কী কী ব্যত্যয় ছিলো সেসব শনাক্ত করা হবে।

মামলার অন্যতম আরেক আসামী রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান পলাতক আছেন, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। মামলার তদন্তে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, তদন্তে অপরাধ অনুযায়ী সবাইকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও জানান তিনি।

অনুমোদন ও নজরদারিতে রাজউকের গাফিলতি থাকতে পারে, অথচ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না আনার বিষয়ে আব্দুল বাতেন বলেন, সরাসরি ক্রিমিনাল অফেন্সে জড়িত থাকলে তদন্তে যদি তাদের নাম আসে, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হব।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে