জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বিধা-বিভক্তি নেই : রওশন

ডেস্ক রিপোর্ট

দেবর কাদের ও ভাবি রওশন এক মঞ্চে
দেবর কাদের ও ভাবি রওশন এক মঞ্চে। ছবি : সংগৃহিত

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্প্রতি দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার পদ থেকে ভাই জি এম কাদেরকে সরিয়ে স্ত্রী রওশন এরশাদকে সেই দায়িত্ব দিয়েছেন। আর এর এক সপ্তাহ পর দেবর-ভাবিকে একসঙ্গে দেখা গেল এক মঞ্চে। 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুব সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে দুজনই বললেন ঐক্যের কথা।

universel cardiac hospital

কো-চেয়ারম্যানের পদ হারানো জি এম কাদেরকে পাশে রেখে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ অনুষ্ঠানে বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বিধা-বিভক্তি নেই। কোনো দ্বন্দ্ব নেই। জাতীয় পার্টির সবাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে।

চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে গত ১ জানুয়ারি এরশাদ এক বিবৃতিতে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে ছোট ভাই জি এম কাদেরকে মনোনীত করার কথা জানান। সংসদে বিরোধী দলের উপনেতার দায়িত্বও তিনি কাদেরকে দিয়ে যান।

এরশাদের অনুপস্থিতিতে কাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাব দেখান বিভিন্ন সভায়। সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা রওশনকেও দলের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছিল না সে সময়।

২০ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর ২০ মার্চ নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে প্রথমবার প্রকাশ্যে আসেন নব্বইয়ে পা রাখা এরশাদ। স্ত্রী রওশন এরশাদ ওই অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান। এরশাদের পাশে জি এম কাদেরকেও ওই অনুষ্ঠানে দেখা যায়।

তার দুই দিনের মাথায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে ‘ব্যর্থতা’ ও দলে ‘বিভেদ’ তৈরির অভিযোগে জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যানের পদ থেকে জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। পরে তাকে সংসদের উপনেতার পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই দায়িত্বে আসেন এরশাদপত্নী রওশন।

দলীয় প্রধানের ওই সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টির বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সম্প্রতি ঘোষণা দেন, এরশাদ সিদ্ধান্ত না পাল্টালে তিনি রংপুর বিভাগের সব নেতাকর্মীকে নিয়ে একযোগে পদত্যাগ করবেন।

সেই বিভাজন দূর করার চেষ্টায় জাতীয় যুব সংহতির অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে রওশন বলেন, জাতীয় পার্টির নয় বছরের শাসনামলে দেশের মানুষকে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। জনগণকে আবারো সেই কথাই বলতে হবে। আগামীতে দলকে ক্ষমতায় নিতে হবে আমাদের।

পাশে থাকা জি এম কাদেরও কথা বললেন একই সুরে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের ইতিবাচক রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। আর জাতীয় পার্টির মূল শক্তি হচ্ছে জাতীয় যুব সংহতি। আমাদের এখন একতাবদ্ধ থাকতে হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে রওশন বলেন, সরকারকেই আগুনের প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে রওশন বলেন, পল্লী বন্ধুর নামে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের শ্রেষ্ঠ রূপকার। তাকে দমিয়ে রাখার জন্যই তার নামে রাজনৈতিক মামলা দেওয়া হয়েছিল।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে জাতীয় পার্টির অনেক অনুষ্ঠানে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দেখা না গেলেও মঙ্গলবার তিনি সভামঞ্চে বক্তব্য দেন।

জাতীয় যুব সংহতির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাকরাইল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ৯টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা করে জাতীয় যুব সংহতি।

অন্যদের মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ফকরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, মীর আবদুস সবুর আসুদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে