পায়েল হত্যার মামলা : বিচার শুরু ৩ আসামির

ডেস্ক রিপোর্ট

বাম থেকে আসামি বাসচালক জামাল হোসেন, তার সহকারী ফয়সাল হোসেন ও বাসের সুপারভাইজর জনি

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় তিন আসামি হানিফ পরিবহনের বাস চালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজারের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক আবদুল হালিম মঙ্গলবার তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আগামী ৮ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রেখেছেন বলে জানিয়েছেন পায়েলের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনছারী।

universel cardiac hospital

আবদুল হালিম চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

মামলার আসামিরা হলেন- হানিফ পরিবহনের বাসচালক জামাল হোসেন, সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনি। আসামিরা জামিনে আছেন।

আইনজীবী মনজুর আহমেদ বলেন, তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আগামী ৮ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রাখা হয়েছে। সেদিন বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। আসামি পক্ষে অব্যাহতির আবেদন করা হলেও আদালত তা নাকচ করেছেন।

এর আগে ২৭ মার্চ অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় তা হয়নি।

গত বছরের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিনের সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল।

২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে পায়েলের লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ।

এরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে তাদের জবানবন্দির বরাতে পুলিশ জানায়, গজারিয়া এলাকায় গাড়ি যানজটে পড়ায় প্রসাব করার কথা বলে বাস থেকে নেমেছিলেন পায়েল। বাস চলতে শুরু করলে তিনি দৌড়ে এসে ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সংজ্ঞা হারান। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার বদলে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন চালক ও সুপারভাইজার।

পায়েলকে অচেতন অবস্থায় সেতু থেকে খালে ফেলে দেয়ার আগে তার পরিচয় গোপন করতে বাসচালক মুখ থেঁতলে দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা ও বড় ভাই গোলাম মোস্তফা কাতার প্রবাসী। বড় ভাইয়ের সন্তান হওয়ার খবরে জুলাই মাসে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন পায়েল। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথেই ঘটে ওই ঘটনা।

পায়েলের মৃত্যুর পর তার মামা গোলাম সরোয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে চালক জামাল হোসেন, তার সহকারী ফয়সাল হোসেন ও সুপারভাইজার জনিকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় ওই হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র পায়েলের বাসা চট্টগ্রামের হালিশহর সিডিএ আবাসিক এলাকায়।

গজারিয়া থানার পুলিশ ওই তিনজনের বিরুদ্ধে গত ৩ অক্টোবর অভিযোগপত্র জমা দেয়। মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।

পরে পায়েলের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনটি ১৬ জানুয়ারি পায় পায়েলের পরিবার। এর আগে ১৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে যান বাসচালক জামাল হোসেন ও সহকারী ফয়সাল হোসেন। পরে সহকারী জনিও উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।

সবশেষ গত ২০ মার্চ চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তাদের জামিন বাতিল করে। জিম্মাদার নারী হলেও আদালতে জমা দেয়া তার এনআইডিতে ছবি জটিলতায় তা বাতিল করা হয়। পরে জিম্মাদার নারীসহ আদালতে হাজির হয়ে গত সপ্তাহে আবারও জামিন নেন তিন আসামি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে