সংশোধিত বাজেটে কাটছাঁট হচ্ছে ২২ হাজার কোটি টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি

অর্থ মন্ত্রণালয়
ফাইল ছবি


চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের আয়ের প্রধান উৎস রাজস্ব। কিন্তু রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ফলে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।

২২ হাজার ৩১ কোটি টাকার বড় কাটছাঁট আসছে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার এবং বৈদেশিক সাহায্য কমে আসায় এ কাটছাঁট করা হচ্ছে।

এতে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়াবে চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট থেকে ৫ শতাংশ কম।

universel cardiac hospital

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট মনিটরিং বিভাগ প্রাথমিকভাবে এ কাটছাঁটের প্রাক্কলন করেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের আয়ের প্রধান উৎস রাজস্ব। কিন্তু রাজস্ব আদায় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। ফলে খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এটি গত অর্থবছর থেকে ৩২ শতাংশ বেশি। কিন্তু এর বিপরীতে অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ।

রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তাই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় আনা হচ্ছে বড় সংশোধন। সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রায় ১৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে তিন লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

গত তিন অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় কাটছাঁট হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এনবিআরের আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এর বিপরীতে আদায় হয় এক লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব বাজেট সংশোধনের পরও ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল তিন হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয় এক লাখ ৭১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।

আর গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব বাজেট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে প্রকৃত আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ এক হাজার ৪৭২ কোটি টাকা (জিডিপির ৯ শতাংশ)।

সংশোধনের পর ঘাটতি আরো এক লাফ দিয়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এবারও বড় কাটছাঁটের পর ঘাটতি আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

সরকারি বড় উন্নয়ন কর্মসূচি হচ্ছে এডিপি। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। ফলে এতে টাকাও খরচ কম হচ্ছে। এটিও বাজেট সংশোধনের বড় কারণ।

প্রকল্প বাস্তবায়নের শ্লথগতির কারণে এরই মধ্যে সরকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। মূল এডিপি লক্ষ্যমাত্রা থেকে আট হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছিল এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক উৎস থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং এক হাজার কোটি টাকা দেশীয় বা অভ্যন্তরীণ উৎসে যোগ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে