আগামী বাজেটে করহার কমিয়ে আওতা বাড়ানো হবে : অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এক টাকাও কর বাড়বে না। বরং করহার কমিয়ে আওতা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা করা হবে, যা এখন আছে ৪০০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি ৭ শতাংশ সুদ হার নির্ধারণ হবে বলে যে ঘোষণা দেন তা সংশোধন করে তিনি বলেন, এই সুদ হার হবে ৯ শতাংশ। সংশোধিত সুদ হার শিগগিরই কার্যকর হবে। এর ফলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য দ্রুত বিকশিত হবে।

universel cardiac hospital

অর্থমন্ত্রী আবারও বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি সৎ ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করা হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া, অর্থসচিব আব্দুল রউফ তালুকদার, আর্থিক বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম ও বিএসইসির চেয়ারম্যান ড.এম খায়রুল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, হাওর, চর ও পাহাড়ি এলাকায় কৃষকদের সুরক্ষায় পরীক্ষামূলক ‘শস্যবীমা’ চালুর ঘোষণা থাকছে আসন্ন বাজেটে। সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও তা কত হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বীমাসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে দেউলিয়া আইন যুগপোযোগী এবং দূর্বল ব্যাংকগুলোকে ‘একীভূত’ করা হবে বলে জানান তিনি।

রাষ্ট্রায়াত্ত জীবন ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের অথারাইজড ক্যাপিটাল এক হাজার কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করার কথা বলেন মন্ত্রী। পদ্মা সেতু, রূপুপুর পারমানবিক বিদুৎকেন্দ্র এর মতো বড় স্থাপনগুলোকে বীমার আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।

রাজস্ব আদায় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ব্যাপক সংস্কারের গুরুত্ব কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে আগামী বাজেটে অতিরিক্ত ৮০ হাজার কোটি টাকা লাগবে। বাড়তি অর্থের জোগান দিতে হলে রাজস্ব আহরণ বাড়াতেই হবে। এ জন্য নতুন নতুন খাত চিহ্নিত করা হচ্ছে।

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, আগামী বাজেটে কোনা ট্যাপ বাড়ানো হবে না। সবাইকে সম্পৃক্ত করে নতুন বাজেট করা হবে এবং এই বাজেটে জনগন উপকৃত হবেন। মন্ত্রী আরও জানান, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে : রেট কমিয়ে যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনা। ভ্যাটের বিষয়ে সমাধান হয়ে গেছে। তিনটি রেট করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

কর সংক্রান্ত ঘন ঘন আদেশ বা এসআরও জারির বিষয়ে সমালোচনা করেন মন্ত্রী। তিনি জানান, অত্যাবশ্যক ছাড়া কর সংক্রান্ত যে কোনো আদেশ কমপক্ষে এক বছর বহাল থাকবে।

পুঁজিবাজারকে দেশের অর্থনীতির ‘আয়না’ হিসেবে উল্লেখ করে কামাল বলেন, এই বাজার যত শক্তিশালী হবে, দেশের অর্থনীতি তত বেগবান হবে। কিন্তু দুভার্গজনক হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি শক্তিশালী হলেও পুঁজিবাজার পিছিয়ে রয়েছে এখনও।

পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকার যা কিছু দরকার তাই করবে এ কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী জানান, প্রত্যেক মাসে একবার এই বাজার নিয়ে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে বসা হবে। ভালো কোম্পানিকে ইনসেনটিভ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এখন অনেক বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে। বিশেষ করে জাপানিরা এদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।

১/১১ এর সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তখন আমাকেও আটক রাখা হয়। দুই বছর জেলে ছিলাম। আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার কী অপরাধ ছিল? অনেকে বলে আমি না-কি ব্যবসায়ী। ব্যবসা করা কী অপরাধ? আগে ব্যবসায়ী ছিলাম, এখন নেই।

ভালো উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সহায়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠালে ব্যবসা হবে কীভাবে? ৯ শতাংশ সুদ হার হলে ব্যাংক ও ঋণ গ্রহীতা সবাই লাভবান হবে। তিনি মনে করেন, বর্তমানে উচ্চ সুদ হার নিয়ে কেউ ব্যবসায় টিকে খাকতে পারবেন না।

আইডিবি সম্মেলনে যোগ দিতে আজ বুধবার মরোক্কোর উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন অর্থমন্ত্রী। সেখান থেকে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে যাবেন তিনি, যা শুরু হচ্ছে ১৪ এপ্রিল থেকে। আগামী ২০ এপ্রিল ঢাকায় ফেরার কথা তার।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে