খুলল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাম্পাসে যাবেন না উপাচার্য

ডেস্ক রিপোর্ট

বরিশাল
শিক্ষার্থীদের বিজয় উচ্ছ্বাস

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা ১১ দিনের অচলবস্থার অবসান হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে তালাবদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন।

শনিবার দুপুরে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবন খুলে দেওয়ার পর বিকেলে তিনটি আবাসিক হলও খুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে চালু হচ্ছে ডাইনিংও। রোববার থেকে যথারীতি ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বরিশালের  জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমঝোতা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া সমঝোতা বৈঠক শেষ হয় বেলা আড়াইটায়।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বরিশাল- ৫ (সদর) আসনের সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিষ্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে মহিউদ্দিন শিফাত।

এ সময় সমঝোতা বৈঠকের আহ্বানকারী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য বিভাগীয় কমিশনার রামচন্দ্র দাস ও সিন্ডিকেট সদস্য বরিশাল বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবীগুলো যৌক্তিক ছিল। উপাচার্য্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মেয়াদকালীন আগামী দেড়মাসে ক্যাম্পাসে আসবেন না। তাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হবে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এর আগে শিক্ষার্থীরা ২২ দফা নিয়ে আন্দোলন করেছিল। ওই ২২ দফা বাস্তবায়নের বিষয়েও পরবর্তীতে আলোচনা হবে। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে স্থানীয় একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে সদস্য করার প্রস্তাব রাখেন।

রেজিষ্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান বলেন, সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেবেন এবং আজ থেকেই হল খুলে দিয়ে ডাইনিং চালু করা হবে। রোববার অফিস আদেশের মাধ্যমে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হবে।

শিক্ষার্থী প্রতিনিধি মহিউদ্দিন সিফাত বলেন, সমঝোতা বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা আমরা মেনে নিয়েছি। আন্দোলন প্রত্যাহারের চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়া হবে ক্যাম্পাসে গিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে অবহিত করার পর।

তবে সাংবাদিকদের ব্রিফিং শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সার্কিট হাউজ চত্বরে ‘জিতল কারা, ববিয়ানরা’ শ্লোগান দিয়ে সার্কিট হাউজ ত্যাগ করে।

 সকাল সাড়ে ১১টায় সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ সদস্যের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দল, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে শিক্ষার্থীরা তাদের ভিসি বিরোধী ২৫ দফা অভিযোগ তুলে ধরে অবিলম্বে ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন। সভায় অংশগ্রহণ করেন বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার ও সিন্ডিকেট সদস্য রাম চন্দ্র দাস, শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর মো. ইউনুস, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে নেতৃত্ব দেন রেজিষ্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান।

প্রসঙ্গত, মহান স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়োজিত চা চক্র অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় গত ২৬ মার্চ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী। ফলে ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে পারেনি।

একইদিন বিকেলে ক্যাম্পাসে অন্য এক অনুষ্ঠানে সকালের ঘটনায় উপাচার্য্য প্রফেসর ড. এস.এম ইমামুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দোলনকারীদের আচরণ ‘রাজাকারের সামিল’ বলে মন্তব্য করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেন।

ড.এস.এম ইমামুল হক শুরু থেকে দাবি করে আসছেন তিনি শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেননি। উপচার্যের দাবি, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যারা বাধা দেয় তাদের মানসিকতা রাজাকারের মতো এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন।

তবে শিক্ষার্থীরা ২৬ মার্চ বিকেল থেকেই ক্যাম্পাসে তীব্র আন্দোলন শুরু করলে ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা এবং তিনটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওই দিন বিকাল ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়।

আন্দোলনরতরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মেনে হলে অবস্থান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। আন্দোলনের দু’দিনের মাথায় উপাচার্য তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তা আমলে নেননি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে