ভারতে রাজনীতি খুবই কঠিন এক খেলা৷ নির্বাচনের পূর্বে হানা-হানি, সংঘাত ও হামলার ঘটনা ঘটে অহরহ। এসব কারণে নির্বাচনের আগে নিজেদের গাড়িকে বুলেটপ্রুফ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থী, রাজনীতিবীদসহ হেভিওয়েটরা।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা, গাড়িবহরে হামলা, কার্যালয়ে হামলা, এমন ঘটনা ঘটে থাকে অহরহ৷ ফলে প্রার্থীরা এখন আর কোনো সুযোগ নিতে চান না৷ খবর ডয়চে ভেলের।
পাঞ্জাবের গাড়ি মেরামত কারখানাগুলো ব্যস্ত গাড়িতে বিস্ফোরণ-নিরোধী দরজা আর বুলেটপ্রুফ জানালা লাগাতে৷ জলন্ধরে বিশেষায়িত সাঁজোয়া যানের চাহিদা বেড়ে চলেছে৷ শহরটির সুঞ্চিত সোবতির কারখানায় এরই মধ্যে চারটি এসইউভি বুলেটপ্রুফ করেছেন৷ আগামী নির্বাচনকে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে দেখা হচ্ছে৷
সোবতি বলছেন, প্রতি নির্বাচনের আগেই এই ঘটনা ঘটে৷ গত শতাব্দীর আশির দশকে যখন পাঞ্জাবে সশস্ত্র হামলার ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল, তখন থেকে রাজনৈতিক নেতা ও অন্যান্য ভিআইপি ক্রেতাদের সাঁজোয়া যান সরবরাহ করে আসছেন সোবতির বাবা৷
সোবতি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন, অন্য সব নির্বাচনের চেয়ে বড়৷ অন্য সব বড় ঘটনার মতো এই নির্বাচনকে ঘিরেও রয়েছে বড় ধরনের শঙ্কা৷ ফলে রাজনীতিবিদরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান৷ গত কয়েক মাস ধরে আমরা কাজ করছি৷’
তিনি জানান, শুধু প্রার্থীরাই যে নিরাপত্তা নিয়ে বিচলিত, তা নয়৷ পেছনে থেকে যারা রাজনীতির কলকাঠি নাড়েন, তারাও আছেন এই তালিকায়৷ উত্তর পাঞ্জাবের পাশাপাশি, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রেও এমন সাঁজোয়া যান তৈরির হিড়িক পড়েছে৷
ভারতে এই ধরনের গাড়ির বাজার বছরে প্রায় ১৫ কোটি ডলারের৷ বিভিন্ন গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বাজার এখন আকারে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে৷ মাহিন্দ্র এন্ড মাহিন্দ্র, টাটা মোটরসও বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য কম দামে বুলেট-প্রুফ গাড়ি বিক্রি করে৷
একটি ব্যক্তিগত গাড়িকে পুরোপুরি বুলেট ও বিস্ফোরণনিরোধী করে তুলতে ৭ থেকে ৭০ হাজার ডলারের মতো খরচ হতে পারে৷ এই কাজে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে৷ তাছাড়া, এমন গাড়ি রাস্তায় নামানোর অনুমতি নিতে সময় লাগে তার চেয়েও বেশি৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাঞ্জাবের এক আইনপ্রণেতা বলেন, ‘সাফল্যের সঙ্গে ঈর্ষাও আসে, যা আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে৷ শত্রু তো দূরের কথা, বন্ধুদেরও আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না৷ নিজের নিরাপত্তার সঙ্গে আমি কোনো আপোশ করতে চাই না৷’
ভারতে রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস অনেক দিনের৷ বিশেষ করে দেশজুড়ে শত শত রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচনের সময় এ সহিংসতা আরও উসকে দেয়৷ দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব বলছে, কেবল ২০১৬ সালেই শতাধিক রাজনীতিবিদ ও দলের কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন৷
ভারতের অন্তত নয়টি রাজ্যে এখনও সশস্ত্র লড়াই চালাচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপ৷ ফলে বরফাচ্ছাদিত কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তরের জঙ্গলে ভরা রাজ্যগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এমনিতেই থাকেন ব্যাপক হুমকিতে৷ নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ হুমকি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে৷
২০১৩ সালে ছত্তিশগড়ে রাজ্য নির্বাচনের প্রস্তুতিকালে গাড়ি বহরে মাওবাদী হামলায় ২৫ জন কংগ্রেস নেতা নিহত হন৷
যেসব রাজ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহী নেই, সেখানেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ মাঝেমধ্যে সহিংস রূপ নেয়৷ ফেব্রুয়ারিতে আঞ্চলিক এক নেতা অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন৷ ভারতের সবচেয়ে উন্নত রাজ্যগুলোর একটি কেরালায় গত তিন বছরে ২০ জনেরও বেশি রাজনৈতিক নেতা নিহত হয়েছেন৷
২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রচার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে৷ ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শুরু হবে, প্রায় ৬ সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন রাজ্যে একে একে চলবে ভোটগ্রহণ৷
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে প্রার্থীদের পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে৷ তবে দিল্লি পুলিশের সাবেক প্রধান ম্যাক্সওয়েল পেরেইরা বলছেন, দেশটির বেশিরভাগ রাজনীতিবিদই নিরাপদে রয়েছেন এবং যারা হুমকি বোধ করছেন, তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশেরই৷ তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা সাঁজোয়া যান প্রয়োজন কি না, তা নির্ধারণের দায়িত্ব পুলিশের৷’
তবে এমন বক্তব্যের থোড়াই কেয়ার করছেন প্রার্থীরা৷ কেউ কেউ তো নিজেদের গাড়িকে রূপান্তর করে পারলে সামরিক ট্যাংকের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন