“পুলিশ দ্রুত মামলা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। এ মামলায় আমরা আরও অনেককে আসামি করতে চাই। আমাদেরকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।”
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তিন দিন পর থানায় মামলা হয়েছে।
নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় চার বোরখা পরিহিত নারীসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে আজ সোমবার মামলা দায়ের করেন।
গত শনিবার সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিলে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে লাইফসাপোর্টে রয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষও গ্রেপ্তার আছেন। অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসার গভর্নিং বডি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, নুসরাতে গায়ে আগুন দেওয়ার দিন দুপুরে সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক নুরুল আফসার ও ছাত্র আরিফুল ইসলামকে আটক করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কামাল বলেন, দুপুরে নুসরাতের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করায় ও আগে আটকদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে মাদ্রাসার দারোয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা, পিয়ন নুরুল আমিনকে আটক করা হয়।
এছাড়া নুসরাতকে শ্লীলতাহানির মামলায় গ্রেপ্তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার মুক্তি ও মামলা প্রত্যহারের দাবিতে মানববন্ধকারী (অধ্যক্ষের স্বজন) সাইফুল ইসলাম, আলাউদ্দিন ও জসিম উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে বলে কামাল জানান।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আটকদের মধ্যে পাঁজজনকে নুসরাতের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে আদালতে পাঠানো হবে। তবে মামলার এজহারের উল্লেখিত বোরখা পরা চার নারীর কাউকে পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি। শনাক্ত হলে তদের গ্রেপ্তার করা হবে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, পুলিশ দ্রুত মামলা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে। এ মামলায় আমরা আরও অনেককে আসামি করতে চাই। আমাদেরকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
তবে মামলার বাদীর এ বক্তব্যের বিষয়ে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাদী নিজে মামলায় স্বাক্ষর করেছে। তারা যদি এ মামলায় আরও কোনো আসামিকে সংযুক্ত করতে চায়, তাহলে আদালতে সম্পূরক এজাহার দাখিল করার সুযোগ রয়েছে।
পুলিশ স্পর্শকাতর এ ঘটনাটিকে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দিয়ে তদন্ত করছে। ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকবে তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে, বলেন ওসি।
এদিকে, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর নুর নবী লিটন বলেন, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দলীয় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটিতে আগের কমিটির অনেকেই স্থান পায়নি। স্থান না পাওয়া কিছু লোক এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।