বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৫০ শতাংশ উৎপাদন করে। বিশ্বের মোট কাঁচা পাট রপ্তানির ৭৮.৫৪ শতাংশই হয় বাংলাদেশ থেকে।
দেশে-বিদেশে পাটজাত পণ্যের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় থমকে পড়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই খাত। ফলে এ খাতের উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনা বা প্রণোদনাও কাজে লাগছে না।
জানা যায়, অসাধু কর্মকর্তারা লোকসান দেখিয়ে অল্প দামে পাটকল ও এর জমি বিক্রির টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
ঘোষিত মজুরিও বাস্তবায়িত হয়নি
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের পাটশিল্পের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সরকারের প্রণোদনায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না এই খাত। তাই পাটকল শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালে মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এমন অজুহাতে শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরিও বাস্তবায়িত হয়নি।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত পে কমিশনের মজুরি এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। ফলে গত ২ এপ্রিল থেকে সারা দেশের ২৬টি পাটকলের প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত
মাত্র কয়েক দশক আগেও পাটশিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় খাত ছিল। তবে বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিকের চাহিদা বাড়ার ফলে পাটের চাহিদা কমতে থাকে। বর্তমানে এর চাহিদা আবারও বাড়ছে।
বিশ্বের ৬০টি দেশে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৫০ শতাংশ উৎপাদন করে। বিশ্বের মোট কাঁচা পাট রপ্তানির ৭৮.৫৪ শতাংশই হয় বাংলাদেশ থেকে।
অন্যদিকে ভারত ৪৯ শতাংশ কাঁচা পাট উৎপাদন করলেও তারা কাঁচা পাট রপ্তানি করে না। অর্থাৎ ভারত স্থানীয়ভাবে পাটের ব্যবহার ও বহুমুখীকরণে জোর দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাকুজ্জামান রতন গণমাধ্যমকে বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পাটক্রয়ের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ঠেকানো না গেলে দেশের সম্ভাবনাময় এই শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ কম।
তিনি বলেন, সরকারের আমলাদের এই অব্যবস্থাপনার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। কোনো কোনো শ্রমিক ৮-১০ সপ্তাহ পর্যন্ত বকেয়া মজুরি পান না। সঠিক সময়ে কাঁচা পাটের অভাবে মিলগুলো উৎপাদনে যেতে পারে না।
৭৮টি বেসরকারি পাটকল লাভজনকভাবে চলে
শ্রমিক নেতা রতন বলেন, দেশে ৭৮টি বেসরকারি পাটকল লাভজনকভাবে চলতে পারলে ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা সরকারকে চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন। কারণ জুলাই মাসে পাট কেনার মৌসুম হলেও সরকারের কর্মকর্তারা টাকা ছাড়ে দেরির অজুহাতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে গিয়ে পাট কেনেন।
এদিকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের উদ্যোক্তারা পাট খাত থেকে ২৩৫ ধরনের পাট পণ্য উৎপাদন করছে, যা আরো বাড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে পাট থেকে তৈরি কার্পেটের বিপুল চাহিদা রয়েছে। পাটের জিও টেক্সটাইলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ৭১৬ কোটি টাকার পাট থেকে তৈরি জিও টেক্সটাইলে ব্যবহার হতে পারে। পাল্প, পেপার ও রেয়নভিত্তিক পাট শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে। একই সঙ্গে সোনালি আঁশের ঐতিহ্য পুনরুজ্জীবিত হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
