ইতিহাসের কষ্টি পাথরে মুজিবনগর দিবস : র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি


১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুজিবনগর দিবসকে খাটো করে দেখার প্রয়াস থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে, ইতিহাসের সঠিক পাঠ অপূর্ণ থেকে যাবে। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পাঠ হবে খ-িত। কিন্তু ইতিহাস তো ইতিহাসই। যত চেষ্টাই অকাল কুষ্মান্ডরা করুক না কেন, তারা সফল হতে পারবে না। কেননা ইতিহাস কোন কল্পকাহিনী নয়।


১৭ এপ্রিল ১৯৭১ বাঙালির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণাপূর্বক সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করলে দেশব্যাপী বিক্ষিপ্তভাবে যে যুদ্ধ শুরু হয়, ১৭ এপ্রিল তা সংঘবদ্ধ রূপ লাভ করে। ১৭ এপ্রিলের আগে অর্থাৎ ২৬ মার্চ রাতে ঢাকায় জল্লাদ টিক্কা খানের নেতৃত্বে পাকহানাদার বাহিনী গণহত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। সেদিনই বাঙালি জাতির জনক, রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণায় ‘বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মৃত্যুঞ্জয়ী আদেশ ও আহ্বান’ জানান। আমরা মনে করিÑ এই দিনটি ২৬ মার্চ ১৯৭১, ১০ এপ্রিল ১৯৭১ ও ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে কোনভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই দিনে ঐতিহাসিক মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটি গুরুত্ববহ অধ্যায়ে প্রবেশ করে। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ যে ‘স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র’ (ঞযব চৎড়পষধসধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব) গ্রহণ করা হয় ও প্রবাসী বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়, তা ১৭ এপ্রিলে প্রকাশ্য ঘোষণা ও শপথ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা লাভ করে।


এই দিনে ঐতিহাসিক মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটি গুরুত্ববহ অধ্যায়ে প্রবেশ করে

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আবহমান কালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। ইতিহাস ঝলমলে রোদের মতো স্বাক্ষী দিচ্ছে যে, বাঙালি জাতির আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঞ্জয়ী আহবানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৭ এপ্রিল ইতিহাসের এই লক্ষ্যার্জনে এক গভীর ব্যঞ্জনাময় দিন। এই দিনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণাকে বৈধ ও আইনি রূপ দেওয়া হয়। যেমনটি বলা হয়েছে- ‘এবং যেহেতু এরূপ প্রতারণাপূর্ণ ব্যবহারের বাস্তব অবস্থা ও পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ন্যায়সঙ্গত দাবি পূরণের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ঢাকায় স্বাধীনাতার ঘোষণা প্রদান করেন এবং বাংলাদেশের মর্যাদা ও সংহতি রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আবেদন জানান এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র হিসেবে গঠন ও ঘোষণা করছি এবং এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রতি অনুসমর্থন দান করছি।’


বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ আবহমান কালের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। ইতিহাস ঝলমলে রোদের মতো স্বাক্ষী দিচ্ছে যে, বাঙালি জাতির আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুঞ্জয়ী আহবানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৭ এপ্রিল ইতিহাসের এই লক্ষ্যার্জনে এক গভীর ব্যঞ্জনাময় দিন।

স্বাধীনতা ঘোষণার এই সনদে সুস্পষ্টভাবে ও সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের অনুসরণে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানি বর্বর সশস্ত্রবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যা শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মেজরিটি দলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখ-তা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

১৭ এপ্রিলের এই ঐতিহাসিক দিনে পৌঁছাতে আমাদেরকে পার হতে হয়েছে অনেক বন্ধুর পথ। ১৯৭০ সনের ১২ নভেম্বরের ইতিহাসের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু মুজিব যে কথা বলেছিলেন তা প্রণিধানযোগ্য। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দেশ-বিদেশের প্রায় দুই শতাধিক সাংবাদিকগণকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন : ‘… তাহলে ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে নিহত ১০ লাখ লোক আমাদের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন, তা সম্পাদনের জন্য, আমরা যাতে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাঁচতে পারি তার জন্য, আমরা যাতে নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারি তার জন্য প্রয়োজন বোধে আরো ১০ লাখ বাঙালি প্রাণ দেবে।’ এখানে উল্লেখ করা এই “আমরা” কোন দেশের নাগরিক? ১৯৬৯ সনের ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত এক সভায় শেখ মুজিব তদানিন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। এই বাংলাদেশকে বাস্তব রূপ দিতেই ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ১৯৭১ এর ৩ মার্চ ও ৭ মার্চ এর ঘোষণাবলি। ৩ মার্চ ১৯৭১ এ ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকির সভাপতিত্বে পল্টন ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ যে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন, তাতে রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ কবিতার প্রথম দশ লাইনকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং সবুজ জমিনের ওপর রক্তিম সূর্যের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকাকে বাংলাদেশের পতাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ৭ মার্চে স্বাধীনতা যুদ্ধের এই সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করলেন : ‘আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়—– তোমাদের (ওপর) কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’ ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থেকো। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ।’ বক্তৃতায় তিনি তাঁর অনুপস্থিতির কথাও ইঙ্গিত করেছিলেন : ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি……..।


১৭ এপ্রিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এক সর্বাত্মক ও সংগঠিত রূপ লাভ করে। শুধু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয়, শুরু হয় রাজনীতি, প্রচার ও কূটনৈতিক যুদ্ধ। সশস্ত্র যুদ্ধের চেয়ে আমাদের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রচার যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কোনভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হচ্ছে ইতিহাসের ধারাবাহিকতার পরিণতি। আর এই ২৬ মার্চের আনুষ্ঠানিক ও আইনগত রূপ হচ্ছে ১৭ এপ্রিল। ১৭ এপ্রিলে পৌঁছাতে অবশ্য আমাদেরকে আরও কয়েকটি স্তর অতিক্রম করতে হয়েছিল। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে ভিত্তি করে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে এম.এ. হান্নানের ঘোষণা, ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় মেজর জিয়ার ঘোষণা, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের যুদ্ধ সংগঠন, একই সময়ে ময়মনসিংহে মেজর শফিউল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেজর খালেদ মোশারফ, চূয়াডাঙ্গায় মেজর আবু ওসমান চৌধুরী প্রমুখের নেতৃত্বে বাঙালি সৈনিকদের ও সমগ্র দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের যুদ্ধ সংগঠনের তৎপরতা উল্লেখযোগ্য।

মোদ্দাকথা ২৬ মার্চ থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ অসংগঠিতভাবে চলছিল। এই যুদ্ধকে পূর্বাঞ্চলে সংগঠিত রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয় ৪ এপ্রিল। এই দিনে কর্নেল ওসমানী ও লে. কর্নেল এম.এ.রব (উভয়েই তদানিন্তন সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এম.এন.এ ছিলেন) হবিগঞ্জ-ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সীমানায় অবস্থিত তেলিয়াপাড়ায় পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন। এ বৈঠকে মেজর জিয়া, মেজর শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ, মেজর কাজী নূরুজ্জামান, মেজর নূরুল ইসলাম, মেজর মমিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তারা ওসমানীকে প্রধান ও এম.এ. রবকে উপ-প্রধান করে মুক্তিফৌজ গঠন করেন। এখানে এ কথা বলা অসমীচিন হবে না যে, ইতোমধ্যে কালুরঘাটের ক্ষণস্থায়ী বেতারকেন্দ্রটি পাকিস্তানিদের দখলে চলে গেলেও মুক্তিকামী বাঙালি হতোদ্যম হয়ে পড়েনি। মাটি হাত ছাড়া হলেও উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হননি। যার যার অবস্থানে থেকেই তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার রাতেই পাকিস্তানি হানাদার পাকবাহিনী জাতির পিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও রাষ্ট্র বিচ্ছিন্নকরণের অপরাধে বন্দি করে। তার আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান সেই আঁধার রাতে হাল ধরেছেন। ১০ এপ্রিল সারা বিশ্বকে তারা জানিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার করা হয়েছে। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নটায় ‘আকাশবাণী’ রেডিওতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাষণ প্রচারিত হলো।

বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার আদর্শের উত্তরসূরিরা কলকাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন। প্রবাসী সরকার ১৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাকে রাজধানী করে সেখানে সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদ ঘোষণার ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের গোপন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই কার্যক্রমের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায় এবং পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষণ করে এবং পাকহানাদার বাহিনী ওইদিনই চুয়াডাঙ্গা দখল করে নেয়।

ওই বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সিদ্ধান্ত নেন যে, পরবর্তী শপথ গ্রহণের দিনক্ষণ ও স্থান তিনি কাউকে জানাবেন না। পাকবাহিনীর বিমান হামলার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে সর্বোত্তম নিরাপদ একটি স্থান তিনি বাছাই করেন। দ্বিতীয়বার বিপর্যয় এড়াতে তাদের মধ্যে এ বিষয়ে কথা চলতো আকার ইঙ্গিতে এবং কোড ব্যবহারের মাধ্যমে।

১৭ এপ্রিল ১৯৭১ এ প্রবাসী বিপ্লবী সরকার তাজউদ্দিন-নজরুল-মনসুর-কামরুজ্জামান এর নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে মেহেরপুরের বৈধ্যনাথতলার মুজিবনগরে। সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়। ১৭ এপ্রিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এক সর্বাত্মক ও সংগঠিত রূপ লাভ করে। শুধু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ নয়, শুরু হয় রাজনীতি, প্রচার ও কূটনৈতিক যুদ্ধ। সশস্ত্র যুদ্ধের চেয়ে আমাদের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও প্রচার যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে কোনভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। এখানেই ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ এ দিনটির ঐতিহাসিকতা। সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকে মুজিবনগর সরকার একটি দৃঢ় সাংগঠানিক রূপ দিয়েছিল। মুজিবনগর সরকার না হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আদৌ সফলতার মুখ দেখতো কিনা, তা বিবেচনার দাবি রাখে। বিবেচনার দাবি রাখে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভূমিকার বিষয়টিও। তাঁরা পশ্চাৎপসরণ করলে মুক্তিযুদ্ধ কখনই কী সংগঠিত রূপ নিত?

সামগ্রিক বিবেচনায় বলতে চাই যে, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুজিবনগর দিবসকে খাটো করে দেখার প্রয়াস থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে, ইতিহাসের সঠিক পাঠ অপূর্ণ থেকে যাবে। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের পাঠ হবে খ-িত। কিন্তু ইতিহাস তো ইতিহাসই। যত চেষ্টাই অকাল কুষ্মান্ডরা করুক না কেন, তারা সফল হতে পারবে না। কেননা ইতিহাস কোন কল্পকাহিনী নয়। আর সেদিন এভাবে তৈরি হয় বাঙালির আরো একটি ইতিহাস। যে ইতিহাস পৃথিবীর মানচিত্রে লাল হরফে চিরকাল লেখা রবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে