স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ঘোষিত ১০০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর গত ১৩ জানুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে পরামর্শ ও নির্দেশক্রমে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই ১০০ দিনের ১২ দফা কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বর্তমান সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ঘোষিত ১০০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিজি দাবি করেন, ঘোষিত ওই ১২ দফার প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ১০০ দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে গুণগত পরিবর্তনের দৃশ্যমান সূচনা মাত্র শুরু হলো। শুধু কথার ফুলঝুড়ি নয়, যতই দিন যাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করা সহজ হবে।
১২দফা বাস্তবায়ন নিয়ে যা বললেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
মহাপরিচালক বলছিলেন, সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত কার্যক্রমের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা ইতোমধ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে। নতুন প্রকল্পগুলোর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, যা পরিকল্পনা কমিশন চূড়ান্ত করছে।
১৬ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিনব্যাপী জাতীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা সপ্তাহ শুরু হয়েছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিকক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন।
ডিজি বলেন, এই সেবা সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোয় স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
”নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি গত ১০০দিনে শতকরা ৪৪ ভাগ থেকে ৮৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে। উপস্থিতির পরিসংখ্যান নিয়মিত দেশের সব জায়গা থেকে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে আসছে”
মহাপরিচালক জানান, স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহের প্রথম দিনে মঙ্গলবার ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স ও ৪৮টি গাড়ি দেয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে আরও ২৯৫টি গাড়ি ও ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স কেনার কাজ শেষ হবে। এই ২৯৫টি গাড়ি কেনা হলে দেশের সব উপজেলা (৪৯২টি) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা গাড়ি পেয়ে যাবেন। বর্তমানে সারাদেশে ৮শ’র বেশি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
সূত্র জানায়, জনবলের উপস্থিতি ও যন্ত্রপাতির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করে তদারকি চলছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি গত ১০০দিনে শতকরা ৪৪ ভাগ থেকে ৮৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে। উপস্থিতির পরিসংখ্যান নিয়মিত দেশের সব জায়গা থেকে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে আসছে।
‘রাজধানীসহ সারাদেশে নতুন নতুন ডিজিটাল বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন ও পুরনো বিকল মেশিনগুলো মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে।’
‘হাসপাতালে যন্ত্রপাতির হালনাগাদ তালিকা সংগ্রহ করে কোন যন্ত্রপাতিতে কত রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে সে পরিসংখ্যানও নিয়মিত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর ফলে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে’।
অধিদফতরের ডিজি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রম পরিদর্শনে গঠিত কমিটি পরিদর্শন করছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমগুলো পরিদর্শনের জন্য ইতোমধ্যেই আট বিভাগে পরিদর্শন করেছেন।
তিনি জানান, ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটির (ডিপিসি) মাধ্যমে ইতোমধ্যেই চিকিৎসা শিক্ষার বেসিক (মৌলিক) বিভিন্ন বিষয়ে (অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, ফার্মাকোলজি ও প্যাথলজি) ডিপিসি হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ফলাফলও প্রকাশিত হয়। শিক্ষকরাও কাজে যোগদান করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল বিষয়ের ডিপিসি ও পরীক্ষা হয়েছে। ফলাফলও তৈরি হয়ে গেছে। এখন শুধু ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষা।
মহাপরিচালক আরো জানান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে যথাযথ প্রচার-প্রচারণা চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে সহজে দৃশ্যমান সাইনবোর্ড ও নিওন সাইনের সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা ও গৃহীতব্য বিভিন্ন ব্যবহারিক চার্জের তালিকা যথাযথভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মন্ত্রী হিসেবে শপথের পরপরই স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতারা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন সেসব সমস্যা এবং তার সমাধানের বিষয়ে সেবা গ্রহীতাদের পরামর্শ গ্রহণের জন্য ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে।
সারাদেশ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে ই-মেইলে অভিযোগ আসছে , অভিযোগগুলো শুনে ফিডব্যাকও দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, স্বাস্থ্য খাতে অনিয়মরোধে এমএসআর (মেডিসিন, সার্জিক্যাল অ্যান্ড রিএজেন্ট )খাতে সমতার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার নতুন প্রক্রিয়া চালু করার মাধ্যমে কমবেশি অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে কোনো প্রকার অনিয়ম করার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে প্রয়োজন ছাড়া যন্ত্রপাতি কেনা হবে না।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ঘোষিত ১০০ দিনের কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০০ দিনের কর্মসূচির ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যম কর্মীদের অবহিত করা হয়েছিল। খুব শিগগিরই আবার সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে জানানো হবে।