আজ রবিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবেবরাত বা লাইলাতুল বরাত। সারা বিশ্বে মুসলমানরা এই রাতকে ভাগ্য রজনী হিসেবে পালন করে আসছে। এ রাতে তারা তাদের নিজেদের অতীতের সব পাপকাজের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। আর ভবিষ্যতে সুখ-সমৃদ্ধির জন্য দোয়া প্রার্থনা করে।
কোনো কোনো আলেম-ওলামার মতে, শবেবরাতে মানুষের আগামী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকেন আল্লাহ। এ কারণে এ রাতে মুসলমানরা মসজিদে ও বাড়িতে রাত জেগে নফল নামাজ, ইবাদত, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিলসহ বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করে থাকে।
এদিকে শবেবরাতে আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শাবান মাসের পরই পবিত্র রমজান মাস। শবেবরাতের ১৫ দিন পর রমজানের রোজা বা এক মাসের সিয়াম সাধনা শুরু হয়। এ জন্য মুসলমানদের কাছে শবেবরাত বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
গত ৬ এপ্রিল জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়, এদিন (৬ এপ্রিল) দেশের কোথাও ১৪৪০ হিজরি সালের শাবান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এ কারণে ৭ এপ্রিল (৬ এপ্রিল দিবাগত রাতসহ) হবে রজব মাসের শেষ দিন। আর ৮ এপ্রিল (৭ এপ্রিল দিবাগত রাত থেকে) থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হবে। এ হিসাবে ২১ এপ্রিল দিবাগত রাতে লাইলাতুল বরাত পালিত হবে।
কিন্তু মজলিসু রুইয়াতুল হিলাল ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, ৬ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদ দেখা গেছে। এ ঘোষণার পরই বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বিভ্রান্তি দূর করতে ১৩ এপ্রিল জরুরি বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। বৈঠক থেকে মাওলানা আবদুল মালেককে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে বিভ্রান্তি নিরসন করতে বলা হয়।
এদিকে সংগঠনটির ব্যানারে ১০ ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট আবেদন করতে ১৫ এপ্রিল আদালতের অনুমতি চান। তবে আদালত তাঁদের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য লিখিতভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কাছে দিতে বলেন।
এর ধারাবাহিকতায় ১৬ এপ্রিল আলেম-ওলামাদের নিয়ে গঠিত ১১ সদস্যের কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠকের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বৈঠকে চাঁদ দেখার কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ৬ এপ্রিল ঘোষিত সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।
মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগের
আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সব স্তরে প্রতিষ্ঠা এবং পবিত্র শবেবরাতের
মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের জন্য সবার প্রতি
আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ শবেবরাত উপলক্ষে গতকাল শনিবার দেওয়া এক বাণীতে
এ আহ্বান জানান।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও বিশ্বের সব মুসলমানকে শবেবরাত উপলক্ষে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌভাগ্যের এই রজনী মানবজাতির জন্য বয়ে আনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত। এই রাতে তিনি ক্ষমা প্রদর্শন এবং প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা প্রদর্শন করেন। তিনি কামনা করেন, ‘পবিত্র শবেবরাত আমাদের সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের বার্তা বয়ে আনবে এবং মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাজত করবেন।’