শিল্পঋণে চড়া সুদ

অর্থনীতি ডেস্ক

ঋণে সুদহার
ঋণে সুদহার। প্রতীকী ছবি

এখনো সুদহার নির্ধারণে কিছু ব্যাংক ইচ্ছামাফিক চলছে। শুধু ক্রেডিট কার্ডই নয়, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের মেয়াদি ঋণেও চড়া সুদ নিচ্ছে তাঁরা। কয়েক মাস ধরে ক্ষুদ্রশিল্পের মেয়াদি ঋণে ২০ শতাংশেরও বেশি সুদারোপ করে আসছে দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংক।

চতুর্থ প্রজন্মের আরেকটি ব্যাংকও একই খাতের ঋণে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদারোপ করছে। আরো কয়েকটি ব্যাংক নিচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে বড় ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাও ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে এখনো ১৪ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুনছেন।

universel cardiac hospital

বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র ওঠে এসেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খাতওয়ারি সুদের হার নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে বেসরকারি ও বিদেশি পাঁচটি ব্যাংক শিল্পে অর্থায়িত মেয়াদি ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে। এ সময়ে সুদহার কমিয়েছে মাত্র দুটি। আর অপরিবর্তিত ছিল ৫২টির সুদহার। ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখন সুদের হার কমার কথা। কিন্তু উল্টো তা বেড়েই চলেছে।

এ ছাড়া রয়েছে নানা রকম গোপন চার্জ। ফলে বাস্তবে সুদহার আরো বেশি হচ্ছে। এতে নতুন শিল্প স্থাপন ও চলমান শিল্প সম্প্রসারণে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেশি হওয়ায় তাঁদের আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।

এ ছাড়া খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বাবদ বড় অঙ্কের বিনিয়োগযোগ্য তহবিল আটকে গেছে। এতে সুদের হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রফিট যেখানে ৫ শতাংশ হয় না, সেখানে এত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা কঠিন। এতে নতুন কোনো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে না। পুরনোরাও ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য।

তিনি বলেন, বিনিয়োগে অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করে ব্যাংকের এই উচ্চ সুদহার। এর জন্য গত কয়েক বছর  বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু ব্যাংক সুদের হার কমিয়েছে। তবে যারা এখনো উচ্চ সুদারোপ করছে তাঁদের বিষয়ে পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মার্চ মাসে যে পাঁচটি ব্যাংক নতুন করে ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে তার মধ্যে একটি বিদেশি খাতের এবং অন্য চারটি বেসরকারি খাতের। যে দুটি ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়েছে সে দুটিও বেসরকারি খাতেরই ব্যাংক। এ ছাড়া বাকি ৫৩টি ব্যাংকের সুদের হার এ মাসে অপরিবর্তিত ছিল।

সূত্র জানায়, নানা সুবিধা পাওয়ার পর ব্যাংকের উদ্যোক্তারা গত বছরের জুন মাসে সিঙ্গেল ডিজিট বা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের ঘোষণা দেন এবং একই বছরের ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা জানানো হয়; কিন্তু ১ জুলাই থেকে সরকারি ৪ ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই তা কার্যকর করেনি।

পরে একই বছরের ২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিব, সব ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারের বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে