‘দেশে শ্রীলংকার মতো সন্ত্রাসী হামলা চালানোর সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই’

ডেস্ক রিপোর্ট

সন্ত্রাসী হামলায়

আমাদের দেশে জঙ্গি কার্যক্রম, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সংস্থাসমূহের সাথে সমম্বয় রয়েছে। ভবিষ্যতে এই সমন্বয় আরো মজবুত হবে। সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কোন দেশ, জাতি ধর্মের সাথে এটাকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। উন্নয়নশীল, অনুন্নয়নশীল এবং উন্নত কোন দেশই এ সন্ত্রাসের থাবা থেকে নিরাপদ নয়।’

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মিট উইথ মনিরুল ইসলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো: মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), ‍পিপিএম (বার)। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব)।

universel cardiac hospital

অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি শ্রীলঙ্কায় পাশবিক হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, এছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে শ্রীলঙ্কায় বর্বর সন্ত্রাসী হামলা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা।  আমাদের দেশে এরুপ জঙ্গি বা সন্ত্রাসী হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা জঙ্গিদের নেই। আমরা এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি।

বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএস এ যোগ দেয়া সদস্যরা দেশে ফিরতে চাইলে তাদের দেশে ফেরত নেয়া হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে মূলত ২০১৪ সালের শেষদিকে কতিপয় লোক আইএস’ এ যোগদান করেছে কথিত আছে।  আমাদের ধারণা মতে তাদের কেউ ধরা পড়েছে, কেউ নিহত হয়েছে অথবা কেউ চিহ্নিত হয়েছেন।

তারা যদি এখন দেশে ফিরতে চায় তাহলে তাদেরকে অবশ্যই এয়ারক্রাফট দিয়ে দেশে ফিরতে হবে। এর জন্য তাদের পাসপোর্ট লাগবে। যেহেতু তারা ২০১৪  সালের শেষের দিকে গিয়েছে তাদের পাসপোর্ট এর মেয়াদউত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। দেশে ফিরতে হলে তাদেরকে নতুন করে পাসপোর্ট আবেদন করতে হবে নতুবা ট্রাভেল ডকুমেন্ট গ্রহণ করতে।

আমরা সিরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে যখন পাসপোর্ট আবেদন পাচ্ছি সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে পাসপোর্ট দিচ্ছি। তাই আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে আসা সম্ভব নয়। তারপরও কেউ যদি ফিরে আসতে চায় তাহলে এয়ারপোর্টেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

কারাগারে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে কারাগারে জঙ্গীরা রেডিক্যলাইজড হচ্ছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস বিরোধী  আইনে যাদের নামে মামলা হয়, তাদের পৃথক কারাগারে রাখা হয়। শুধুমাত্র কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে যখন তাদের আদালতে নেয়া হয়, তখনই অন্যান্য আসামীদের সাথে দেখা হয়।

এর বাইরে অন্য আসামীদের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ নেই। সন্ত্রাস বিরোধী আইনে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিচারের জন্য ২ টি সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুন্যাল গঠন করা হয়েছে।  তাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হচ্ছে।

ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদের আমদানিকারকরা চিহ্নিত হয়েছে কিনা? এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দিকে যারা আফগানিস্তান গিয়েছিল তারাই দেশে ফিরে ধর্মীয় ও সহিংসতাভিত্তিক জঙ্গিবাদের সূচনা করেছে। প্রথমদিকের এসব আমদানিকারকদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারো কারো ফাঁসি হয়েছে। কয়েকজন হয়তো পলাতক রয়েছে তবে সবাই চিহ্নিত।

বাংলাদেশে আইএস’র খলিফা নিয়োগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা আইএস এর নিজস্ব দাবি। বাংলাদেশ তাদের কোনো খলিফা নাই।

রোহিঙ্গাদের  জঙ্গিবাদের জড়ানোর  সম্ভাবনার বিষয়ে সাংবাদিকদের করা অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তারা দীর্ঘদিন এ দেশে থাকলে সোশ্যাল ডিজঅর্ডারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। তাদের দেশে পাঠাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

রোহিঙ্গারা তাদের বাড়ি হারিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে, তারা ভবিষ্তে উগ্রবাদের জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে আমাদের দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রেখেছে। তাদের জঙ্গিবাদে  জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি এমন কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আগাম জানতে পারবো।

তিনি বলেন, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস দমনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি সবসময় ছিল। ২০১৬ সালে হলি আর্টিসানে হামলার পর এই জিরো টলারেন্স নীতি প্রধানমন্ত্রী পুনঃব্যক্ত করেন এবং জনগণকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। এছাড়াও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন করতে পাঠ্যপুস্তকে কিছু কিছু কর্মসূচি যুক্ত করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করছি। তরুনদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। উগ্রবাদের বিরুদ্ধে আমরা সচেতনতামূলক বিভিন্ন র‌্যালি, ব্যানার, ফেস্টুন প্রদর্শনসহ লিফলেট বিতরণ করেছি। আগামীতেও আমরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।

অনুষ্ঠানে ক্র্যাবের সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারওয়ার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস্ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমানসহ ক্র্যাব নেতৃবৃন্দ ও সিটিটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে