রোহিঙ্গা গণহত্যার সংবাদ প্রকাশ করায় ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের সাত বছরের সাজা বহাল রেখেছে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ আদালত।
রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সো ও (২৮) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা যে আপিল করেছিলেন আজ (মঙ্গলবার) তা খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোটের বিচারপতি সোয়ে নাইং।
রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সেনা অভিযানের সময় ১০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের নাগরিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ইন দিন ওই গণহত্যার ওপর অনুসন্ধান চালানোর সময় গ্রামবাসীর কাছ থেকে তিনটি ভয়ংকর ছবি সংগ্রহ করেছিলেন। সেগুলোর দুটিতে একটি গণকবরের সামনে ১০ জন রোহিঙ্গা পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে থাকতে দেখা যায়।
তৃতীয় ছবিতে ওই ১০ জনকেই ওই গণকবরে গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত হয়ে অসাড় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওই দুই সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদন শেষ করার আগেই ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাফতরিক গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার দেখায়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে সাত বছর করে কারাদণ্ড ঘোষণা করে ইয়াঙ্গুনের একটি জেলা আদালত।
নভেম্বরের শুরুতে ইয়াঙ্গুনের হাইকোর্টে দুই সাংবাদিকের পক্ষে আপিল করেন তাদের আইনজীবীরা। এ বছরের ১১ জানুয়ারি আপিল খারিজ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রাখা হয়। ওই সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করায় তাও আজ খারিজ করা হলো।
মিয়ানমারের কারাগারে থাকা অবস্থায় রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিক গত ১৫ এপ্রিল পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হন।
পুলিৎজার কর্তৃপক্ষ বলেছে, রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা ও ধারাবাহিকভাবে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে পাঠানোর হোতা মিয়ানমারের সামরিক ইউনিট ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীর পরিচয় দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
অত্যন্ত সাহসী সেসব প্রতিবেদনের জন্য ওই দুই সাংবাদিককে কারাগারে যেতে হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় কাজ করা সংগঠনগুলো, জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান রয়টার্স সাংবাদিকদ্বয়ের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে মিয়ানমার সরকারের কাছে তাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বন জানিয়ে আসছেন