দেশের টেলিযোগাযোগ সেবার অগ্রগতির জন্য নতুন সিম সংযোগ ও প্রতিস্থাপনে সম্পূর্ণ কর রেয়াত চাচ্ছে টেলিকম অপারেটররা। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারে মূল্য সংযোজন করসহ (ভ্যাট) অন্যান্য ফিও উঠিয়ে নেয়ার দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীতে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে জাতীয় বাজেট-পূর্ব আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস বাংলাদেশ (অ্যামটব) এসব দাবির কথা বলেছে।
এ ছাড়া আপিল প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে ১০ শতাংশ ফির বদলে অর্থ পরিশোধের শর্তের ভেতর এককালীন ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করারোপের দাবি জানিয়েছে তারা।
কমিশনার (আপিল), আপিল ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চ আদালতের মতো তিনটি ফোরামে আপিল পেশ করতে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কখনো যৌক্তিক হতে পারে না বলে মত দিয়েছে মোবাইল অপারেটরদের এ সংগঠন।
অ্যামটবের মতে, নতুন সিম সংযোগ, সিম প্রতিস্থাপন ও আরইউআইএমের জন্য ১০০ টাকা শোধ করতে হচ্ছে একজন গ্রাহককে। কাজেই সিম, আরইউআইএম সংযোগ ও প্রতিস্থাপনে এবং আসন্ন ভার্চুয়াল সিমের ওপর থেকে কর উঠিয়ে নেয়া উচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের।
এতে কমদামে সিম সংগ্রহ করতে পারবেন গ্রাহকরা এবং মোবাইল ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত হবে।
এ ছাড়া সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর ভ্যাট নিবন্ধন না থাকায় ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট গ্রহণ থেকে সেবাগ্রহীতারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ভ্যাটযোগ্য পরিসেবার জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ভ্যাট নিবন্ধনভুক্ত হওয়ার বিধি সম্পর্কিত স্পষ্ট নির্দেশনা প্রণয়নের প্রস্তাব করে টেলিকম অপারেটররা।
বর্তমানে মোবাইল অপারেটরগুলোর বার্ষিক মোট বিক্রয়মূল্যের ওপর শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ আয়কর অথবা বিভিন্ন উৎসে জমাকৃত অগ্রিম আয়করের মধ্যে যেটি বেশি, সেটিই সর্বনিম্ন কর হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সর্বনিম্ন কর ব্যবস্থার প্রত্যাহার চাইছে অ্যামটব।
মোট ইন্টারনেট ব্যবহারে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ দিতে হচ্ছে। কাজেই এ সম্পর্কিত আইনের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ অব্যাহতি চেয়েছে তারা। যাতে তা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকে।
অ্যামটবের দাবি, ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট অব্যাহতি পেলে তা সাধারণ মানুষের জন্যও সাশ্রয়ী হবে।
লিখিত দাবিতে সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে আয়কর অধ্যাদেশের তৃতীয় তফসিলে গুটিকয়েক মেধাস্বত্বের ওপর অবলোপন অ্যামোটাইজেশন বা মূল্য নিরূপণ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে সব মেধাস্বত্বের ওপর অ্যামোটাইজেশন সুবিধা চাচ্ছেন তারা।
অ্যামটব মনে করে, সহকারী কমিশনারের কিংবা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার ক্ষমতা থাকা উচিত নয়। কেবল কমিশনারদেরই এমন দায়িত্ব দেয়া উচিত। বর্তমান বিধিমালায় সহকারী কমিশনার ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যহারের ঝুঁকি রয়েছে। এতে করদাতাদের আলাদা ঝক্কি পোহাতে হচ্ছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে অ্যামটবের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন রবি আজিয়াটা লিমিটেডের কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স প্রধান সাহেদ আলম।
এ ছাড়া রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলালিংকের ভারপ্রাপ্ত সিইও এবং প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা পিয়ারে বুট্রোস ওবেইদ, বাংলালিংকের কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা তাইমুর রহমান, গ্রামীণফোনের উপপ্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মুস্তফা আলিম আওলাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।