বাসচালক জালাল উদ্দিন (৩০) হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ৮৭ রুটে ডাকা পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ দাবি আদায়ে প্রশাসনের আশ্বাসের ফলে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ বিভিন্ন রুটে হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বৈঠক সূত্র জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবারের বৈঠকে জেলা প্রশাসক নিহত বাসচালক জালালের পরিবারের জন্য নিজের তহবিল থেকে এক লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকেও জালালের পরিবারকে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এছাড়া মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারের বিষয়ে যাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মনিটরিং করা হয়, সেই আশ্বাসও দেয়া হয়।
পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী আরো জানান, শ্রমিক সংগঠনগুলো বৈঠকে বসে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা প্রশাসনের আশ্বাসের ওপর আস্থা রেখেছি। আগামী রোববার থেকে যে ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছিল তা প্রত্যাহার হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত পরে নেয়া হবে।
জালাল হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনে নামে পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃজেলার ৬৪টি রুটসহ ৮৭টি রুটে একযোগে ২৪ ঘণ্টার যাত্রীবাহী পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।
দ্বিতীয় দফায় রোববার সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ২৪ ঘণ্টার যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় সংগঠনগুলো।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ৮টায় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস। পথে পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাসংলগ্ন শিকলবাহা সেতু এলাকায় বাসটিকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে থামান অন্তত ৭ জন ব্যক্তি। এরপর তারা বাসে উঠে তল্লাশি শুরু করেন।
একপর্যায়ে বাসের চালক জালালের হাতে হাতকড়া পরিয়ে ইয়াবা বের করে দিতে বলেন তারা। ইয়াবা নেই বলে জানালে চালককে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেয়া ব্যক্তিরা।
একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে লাথি মারতে মারতে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রাত আড়াইটার দিকে মুমূর্ষু জালালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।