রমজান মাসকে সামনে রেখে বাড়ছে পেঁপে-পেঁয়াজ-আলুর দাম

ডেস্ক রিপোর্ট

রমজান মাসকে সামনে রেখে রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের তুলনায় বেড়েছে পেঁপে, পেঁয়াজ ও আলুর দাম। পেঁপে, পেঁয়াজ ও আলুর দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সপ্তাহ ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সব ধরনের ডিমের দাম।

বিক্রেতাদের দাবি জানান, গত সপ্তাহে কয়েকদিনের শিলাবৃষ্টিতে প্রচুর সবজি নষ্ট হয়েছে। তাই সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। আর ক্রেতাদের অভিযোগ রমজান মাসকে সামনে রেখে কারসাজি করে পেঁপে, আলু ও পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সূত্রাপুর বাজার, শ্যামবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার ও সেগুণবাগিচা কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

বাজারগুলোতে দেখা যায়, আগের তুলনায় পেঁপে, আলু ও পেঁয়াজের সবজির দাম বাড়লে শাক-সবজি, মাছ-মাংস আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। এছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে অপরিবর্তিত থাকা মুদি পণ্যের মধ্যে গত সপ্তাহে বেড়েছে চিনির দাম।  প্রতি কেজি চিনি দাম ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়। তবে সবজি, মাছ ও মাংসের চড়া দামে অস্বস্তিতে রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে। যা গত সপ্তাহে ছিলো ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর প্রতিকেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১৫ টাকা। অর্থাৎ খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে বেড়েছে সাত টাকা পর্যন্ত। আর বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সে হিসাবে কেজিপ্রতি পেঁপের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ২০ টাকা।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনো অযুহাতেই রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে দেয়া হবে না। বাজার মনিটরিং চলছে। এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়া হবে। বাজারে চাহিদার তুলনার অনেক বেশি পণ্য মজুত রয়েছে।

এদিকে, আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাকা টমেটো ও শসা। দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সজনে ডাটা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতি কেজি ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সবজি ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, এবার পেঁয়াজ ও আলুর ফলন খুব ভালো হয়েছে। নতুন পেঁয়াজ ও আলুর সরবরাহ বেশি থাকায় অনেকদিন ধরেই পণ্য দুইটির দাম কমছিল। রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা মজুত করে রেখেছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহের শিলাবৃষ্টিতে অন্যান্য সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে সবজির বাজার এখনও চড়া রয়েছে। সামনে আরও দাম বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

নয়া বাজারে বাজার করতে আসা মোহসিন হোসেন বলেন,  রোজায় আলু-পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকে। রোজা আসতে মাত্র দশদিন বাকি, এর আগেই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতিবছরই রোজার আগে বাজারে কঠোর তদারকি করা হবে, দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। ফলে মুনাফালোভীরা কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না।

অপরিবর্তিত রয়েছে, চাল ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম। বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাওর চাল ৯০ থেকে ৯৫। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। আর ৫লিটারের প্রতি গ্যালনে রুপচাঁদা ৫০০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা, তীর ৪৯০ টাকা, ফ্রেশ ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সরিষার তেল প্রতিকেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রোজা সামনে রেখে আলু পেঁয়াজের দাম বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। বাজারভেদে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিলো ১০০ থেকে ১০৫ টাকা।

সূত্রাপরের ডিম ব্যবসায়ী আরজ আলী বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা কমেছে। সামনে দাম আরও কমতে পারে। কারণ রোজায় সাধারণত ডিমের চাহিদা কম থাকে।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতোই বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭৫ টাকা কেজি দরে। লাল লেয়ার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা ও পাকিস্তানি কক ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির মতো দাম অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৫৮০ টাকা কেজি। আর প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮৫০ টাকায়।

মাংসের মতো সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। নদীর ৯শ’ থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশ তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। ১ কেজি ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম প্রতি কেজি চার হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তবে ৫শ’ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম তিন হাজার টাকা। তবে বার্মিজ ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলক কম।

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ, দাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে