২০০২ সালের ২ জুন অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে করা এক মামলায় গ্রেফতার হন অশীতিপর রাবেয়া খাতুন। এরপর ১৭টি বছর কেটে গেছে, অথচ আজও রায় পাননি তিনি।
রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা ওই মামলা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে মামলার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, এই মামলায় বিচারে বিলম্ব কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত।
সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারককে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ-সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আশরাফুল আলম নোবেল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
আদালতের আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘আশরাফুল আলম নোবেল নামে এক আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১২ মে মামলাটি শুনানির জন্য আসবে।’
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘অশীতিপর রাবেয়া : আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বৃদ্ধার বরাত দিয়ে বলা হয়, ১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেই। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে, তা-ও জানি না। পুলিশরে শরবত, মোরাব্বা বানাই খাওয়াছি। তারপরেও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না। মরতে চাই। অনেকদিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।’
অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধে তেজগাঁও থানার এসআই আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে অশীতিপর রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন ২০০২ সালের ২ জুন।
মামলা নম্বর ১৯৩৮/০২। এরপর তিনি গ্রেফতার হন, ছয় মাস কারাগারে থেকে জামিনও পান। পরে তাকেসহ দুই আসামি জুলহাস ও মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২০০৩ সালের ২৪ মার্চ শুরু হয় মামলার বিচার।
তেজগাঁও থানা এলাকার ৩/ক গার্ডেন রোড, কাজী আবদুল জাহিদের ঘরের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয় রাবেয়া খাতুনকে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। সেই মামলা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকার আদালতের বারান্দায় ১৮ বছর ধরে ঘুরছেন এই অশীতিপর মানুষটি।