ঘূর্ণিঝড় ফনির অবস্থান এখন উপকূলের খুব কাছাকাছি। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে পটুয়াখালী ও বরগুনায় ঝড়ো হাওয়াসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারাদেশেই শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
পাশাপাশি সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে নদীগুলোতেও। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, ঝড়ের প্রভাব শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই কুয়াকাটাসংলগ্ন সাগরে উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হয়। সৈকতে আছড়ে পড়ে বড় বড় ঢেউ। ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্র থেকে মাছধরার ট্রলার ও নৌকাগুলো তীরে ফিরছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে দুর্গত এলাকা থেকে যাতে মানুষকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া যায় সে জন্য সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।
কুয়াকাটার হোটেল সংশ্লিষ্টরা জানান, আবহাওয়ার ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা শুনে অনেক পর্যটক হোটেলের বুকিং বাতিল করে বিকেলে তাদের নিজ গন্তব্যে চলে গেছেন। আর বর্তমানে যারা অবস্থান করছেন তারা শুক্রবার সকালে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় ফনি পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে বর্তমানে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। যেহেতু মূল ঘূর্ণিঝড় এদিকে আসবে না, সেহেতু মহাবিপদ সংকেতের দিকে যাবে না।
তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড় ফনি শুক্রবার দুপুরে ভারতে আঘাত হানার পর বাংলাদেশের উপকূলে সন্ধ্যায় আঘাত হানবে। কিন্তু ঝড়ের আগের প্রভাব সকাল থেকে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনির ৮৬ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) কবীর মাহমুদ জানান, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সরিয়ে নেয়া হচ্ছে লোকজনদের
ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাব মোকাবিলায় সম্ভাব্য আক্রান্ত ১৯ জেলার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। শুক্রবার সকাল থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এছাড়া ফনির আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্যও সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোপূর্বে বৃহস্পতিবার (২ মে) সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে যেন প্রাণহানি না ঘটে, সেজন্য সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। একইসঙ্গে সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেলেও তাদের ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা জানান, সাইক্লোন সেন্টারে মানুষজন আশ্রয় নেওয়ার পর বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন- মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বরগুনায় ৩৩৫টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে রাখা হয়েছে। এতে অন্তত ২ লাখ মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবে।
এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দুই’শ ২৬ বান্ডিল ঢেউটিন, চার’শ ২৩ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্য, নগদ ১৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামও দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। ভারপ্রাপ্ত এই জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ মোকাবেলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বিশেষ সভা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন- দুর্যোগ মোকাবেলায় সব সংস্থাকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় উপজেলাসহ সব উপজেলার ইউএনওকে আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবার, স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
জোর করে হলেও সরিয়ে নেওয়া হবে
কেউ যদি আশ্রয় কেন্দ্রে না যেতে চায় তাহলে বাধ্য করা হবে। প্রয়োজনে পুলিশ তাদের কোলে করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, এসব কারণে পুলিশ প্রস্তুত।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’র আঘাত থেকে রক্ষা করতে ১৯ জেলার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে নিজে থেকেও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। তবে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থেকেও নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চাইবেন না, জোর করে হলেও সরিয়ে নেওয়া হবে তাদের।