যুবক হয়ে মায়ের বুকে ফিরল নিখোঁজ শিশু নাঈম

সারাদেশ ডেস্ক

১৩ বছর পর নাঈম ফিরল তার পরিবারে
১৩ বছর পর নাঈম ফিরল তার পরিবারে। ছবি : সংগৃহিত

‘বাড়ি যাব …। মায়ের কাছে ঘুমাব। বাড়ি গিয়ে মাঠে যাব। ছাগলের জন্যি ঘাস কাটব।’ আড়ষ্ট কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী যুবক নাঈম হাসান (২০)।

নিখোঁজের ১৩ বছর পর মায়ের সান্নিধ্যে এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করেন নাঈম। মা-বাবাও সন্তানকে ফিরে পেয়ে খুশি।

আজ রোববার সকালে যশোর সার্কিট হাউস চত্বরে বাবা-মা ও সন্তানের অন্যরকম অভিব্যক্তিতে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাগুরার আদালতের নির্দেশে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল নাঈমকে তার বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেন। এ সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সুবর্ণখোলা গ্রামের ওমর আলী বিশ্বাস ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে নাঈম হাসান। ২০০৭ সালের ১৪ মে মাগুরার তৎকালীন প্রথম শ্রেণির আদালতের নির্দেশে তাকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন এখানেই বন্দি ছিল নাঈম। মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে নাঈম হাসানকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।


২০০৬ সালের ৮ এপ্রিল নাঈম হারিয়ে যায়

নাঈমের মা আছিয়া বেগম বলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করতাম। ২০০৬ সালের ৮ এপ্রিল নাঈম সেখান থেকে হারিয়ে যায়। এরপর অনেক জায়গায় তাকে খুঁজেছি। থানায় জিডি করেছিলাম। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাইনি। একমাস আগে আমাদের বাড়ির পাশের একজন আনসার সদস্য যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বদলি হয়ে এসেছেন। তিনি নাঈমকে দেখে আমাদের সন্ধান দেন।

তিনি বলেন, এরপর এখানে এসে তাকে চিনতে পেরেছি। কর্মকর্তাদের জানালে তারা প্রমাণ দিতে বলেন। এরপর জন্মসনদ, চেয়ারম্যানের প্রত্যায়নপত্র জমা দিয়েছি। আদালতের নির্দেশে ছেলেকে ফিরে পেলাম। খুব খুশি হয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নাঈমের বাবা ওমর আলী বিশ্বাস বলেন, আমার চার ছেলে মেয়ে। নাঈম মেজ। ওকে ফিরে পেয়ে আমরা খুব খুশি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ২০০৭ সালের মে মাসে মাগুরার শ্রীপুর থেকে উদ্ধার হয় বাকপ্রতিবন্ধী নাঈম। ওই বছরের ১৪ মে মাগুরার তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে (তৎকালীন) পাঠানো হয়। ১২ বছর ধরে নাঈম এখানে ছিল।

তিনি বলেন, সে কথা বলে অস্পষ্ট। নিজের নাম ছাড়া পরিচয় বলতে পারত না। সে খুব চঞ্চল। একমাস আগে কেন্দ্রের এক আনসারের মাধ্যমে তার পরিবারের সন্ধান মিলেছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তাকে পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পারলাম। এটা খুবই আনন্দের।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, দীর্ঘদিন পর নাঈম তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। তারা খুবই আনন্দিত। তাদের মিলিত করতে পারায়, আমারও খুশি। নাঈম ভালো থাকুক, এটাই প্রত্যাশা করি।

অনুষ্ঠানে নাঈমের বাবা মায়ের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তর উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম, প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ, যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাইকো সোস্যাল কাউন্সেলর মুশফিকুর রহমান।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে